ম্যাচ জিতলে সাত খুন মাফ, কার্যত এই তত্ত্বেই ক্যাপ্টেন হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়ার ভুলচুক এতদিন পর্দার আড়ালে ছিল। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারত টি-২০ সিরিজ হারার পরেই সামনে চলে আসে পান্ডিয়ার নেতৃত্বের রুক্ষ দিকটি। প্রকট হয় ভুল-ভ্রান্তিগুলি।
দল হারলে নেতৃত্বের ফাঁক-ফোকর নিয়ে আলোচনা হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে বাস্তবকিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরের সদ্য সমাপ্ত টি-২০ সিরিজে হার্দিককে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিতান্ত এলোমেলো দেখিয়েছে। ভুল করেছেন বিস্তর এবং যার বড়সড় মাশুলও দিতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে।
আইপিএলে হার্দিক পান্ডিয়ার ডাকাবুকে নেতৃত্ব নিয়ে ধন্য ধন্য রব ভারতীয় ক্রিকেটমহলে। ২টি মরশুমে গুজরাট টাইটানসকে নেতৃত্ব দিয়ে একবার চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন পান্ডিয়া। একবার রানার্স হয়ে সন্তুষ্ট থাকে টাইটনস। অর্থাৎ, ২টি মরশুমেই হার্দিকের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়র লিগের ফাইনালে ওঠে গুজরাট।
টি-২০ ক্রিকেটে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েও হার্দিক সাফল্য পেয়েছেন। তবে বেশিরভাগ সময়েই পান্ডিয়া সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে লো প্রোফাইল টি-২০ সিরিজে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন্সি করেছেন, যেখানে ভারতীয় দলের জয় কার্যত আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-২০ ফর্ম্যাটে বরাবর ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। তবে তাই বলে তাদের কাছে সিরিজ হার মেনে নেওয়া মুশকিল ভারতীয় সমর্থকদের পক্ষে। ভারতের টি-২০ ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রথমবার সিরিজ হারের স্বাদ পাওয়া পান্ডিয়া এখনও পর্যন্ত জাতীয় দলকে ১৬টি ২০ ওভারের ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ১০টি ম্যাচ জেতে এবং ৫টি ম্যাচে পরাজিত হয়। ১টি ম্যাচ টাই হয়। ৫টি হারের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই নেতা হিসেবে পান্ডিয়াকে হারের মুখ দেখতে হয় ৩টি ম্যাচে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ক্যাপ্টেন হিসেবে পান্ডিয়া যে ভুলগুলি করেন:-
১. ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অকারণ পরীক্ষা নিরীক্ষার রাস্তায় হাঁটেননি পান্ডিয়া। তবে স্যামসনকে নির্দিষ্ট ব্যাটিং অর্ডার উপহার দিতে পারেননি তিনি। যে জায়গায় তাঁকে ব্যাট করানো হয়, তা স্যামসনের পক্ষে উপযুক্ত নয় বলে মনে হয়েছে বিশেষজ্ঞদের। কখনও আবার সঞ্জুকে টপকে নিজে ব্যাট করতে নেমেছেন হার্দিক।
২. বোলিং আক্রমণ নিয়ে অহেতুক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন পান্ডিয়া। নতুন বলে নিজে সফল হওয়া সত্ত্বেও কখনও আর্শদীপের সঙ্গে অক্ষরের হাতে নতুন বল তুলে দিয়েছেন। আবার কখনও নতুন বলে দৌড় শুরু করেছেন মুকেশ। স্পিনারদের দিয়ে কখনও প্রথম দশ ওভারে বিস্তর বল করিয়েছেন, আবার কখনও পরের দশ ওভারে। নির্দিষ্ট জায়গা অনুযায়ী বোলারদের ব্যবহার করেননি হার্দিক। আসলে কোন সময়ে কোন বোলার কার্যকরী হতে পারেন, এমন কোনও পরিকল্পনাই চোখে পড়েনি পান্ডিয়ার নেতৃত্বে।
৩. অক্ষর প্যাটেলের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেননি হার্দিক। পুরানের ভয়ে তাঁকে কোনও ম্যাচে বলই করারননি তো আবার কখনও প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই তাঁর বোলিং কোটা শেষ করিয়েছেন পান্ডিয়া। মাত্র ২টি ম্যাচে অক্ষরের বোলিং কোটা পূর্ণ করান হার্দিক। চাপের মুখে অভিজ্ঞ অক্ষরের থেকেও পান্ডিয়ার কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হয় তিলক বর্মা। নির্ণায়ক ম্যাচে অক্ষরকে দিয়ে মাত্র ১ ওভার বল করান হার্দিক। ১টি ম্যাচে ২ ওভার বল করিয়েই সরিয়ে দেওয়া হয় প্যাটেলকে। একটি ম্যাচে তো অক্ষরকে বলই করাননি হার্দিক।
৪. যুজবেন্দ্র চাহাল যে ম্যাচগুলিতে ভালো বল করেন, সেই ম্যাচগুলিতে তাঁর বোলিং কোটা শেষ করাননি হার্দিক। চাহালকেও সুযোগ বুঝে ব্যবহার করতে ব্যর্থ পান্ডিয়া। মুকেশ কুমারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাঁকেও কার্যত ডেথ ওভারের আগে বল করতে না ডাকার পণ করেছিলেন পান্ডিয়া।
৫. সর্বোপরি শুরুতে ব্যাট করতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই কার্যত টস করতে নামেন পান্ডিয়া। টস হারলেই তাঁর শরীরিভাষায় হতাশা ধরা পড়ত। তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে রান তাড়া করে অনায়াসে জেতা সত্ত্বেও শেষ ম্যাচে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন হার্দিক। শেষ ম্যাচে ক্যাপ্টেনের এই সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হয় দলকে।