'ফাইনাল'-র আগে শেষ পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। রবিবার বেরোতে চলেছে রেজাল্ট। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই চারটি রাজ্যের (মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং তেলাঙ্গানা) বিধানসভা নির্বাচনের গণনা শুরু হতে চলেছে। মিজোরামেও রবিবার গণনা হওয়ার থাকলেও তা শেষমুহূর্তে পিছিয়ে গিয়েছে। সোমবার গণনা হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যে। আর সেই ‘সেমিফাইনালে’ কোন দল বাজিমাত করে, সেদিকেই নজর আছে সংশ্লিষ্ট মহলের। রাজনৈতিক মহলের মতে, যে দলই জিতুক না কেন, তা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বড় ‘বুস্টার’ হবে। বুথফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, একেবারে ‘ক্লিয়ার উইনার’ পাওয়া যাবে। মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে বিজেপিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। আবার ছত্তিশগড় এবং তেলাঙ্গানা জয়ের ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে এক্সিট পোলে। তবে এটাও ঠিক যে রবিবার চার রাজ্যের ভোটের রেজাল্ট নিছকই অনুঘটক হতে পারে। তা ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের উপর প্রত্যক্ষভাবে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কারণ ২০১৮ সালে হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যে সরকার গড়েও ২০১৯ সালের ভোটে নরেন্দ্র মোদী ম্যাজিকের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কংগ্রেস।
মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের গণনা
এক্সিট পোলের আভাস অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে সামান্য এগিয়ে আছে বিজেপি। অর্থাৎ ২০১৮ সালের নির্বাচনের যাবতীয় নাটকের পরে এবার গেরুয়া শিবির ক্ষমতা ধরে রাখবে বলে আভাস মিলেছে বুথফেরত সমীক্ষায়। তবে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান দাবি করেছেন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রশ্নই ওঠে না। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা শিবরাজের পূর্বসূরি কমল নাথের দাবি, রাজ্যের মানুষের উপর তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা আছে।
শেষপর্যন্ত কার আত্মবিশ্বাস বাস্তবে পরিণত হবে, তা রবিবারই বোঝা যাবে।নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ৫২টি জেলার সদর দফতরে ২৩০টি বিধানসভা আসনের জন্য গণনা হবে (ম্যাজিক ফিগার ১১৬)। সেখানেই নির্ধারিত হবে ২,৫৩৩ জন প্রার্থীর ভাগ্য। যে তালিকায় আছেন শিবরাজ, কমল নাথ, নরেন্দ্র সিং তোমর (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী), প্রহ্লাদ তোমর (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী), ফগ্গন সিং কুলাস্তে (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী), কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রীতি পাঠকদের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরা।
রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনের গণনা
বুথফেরত সমীক্ষায় আভাস মিলেছে যে রাজস্থানে ক্ষমতা হারাতে চলেছে কংগ্রেস। সামান্য এগিয়ে আছে বিজেপি। আর সেটাই যদি হয়, তাহলে তিন দশকের ট্র্যাডিশন বজায় থাকবে মরুরাজ্যে। কারণ ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি পাঁচ বছরে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষমতার ব্যাটন হেরফের করা হয়েছে। যে রাজ্যে মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ২০০। তবে এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ১৯৯টি আসনে ভোট হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক প্রবীণ গুপ্তা জানিয়েছেন, ৩৬টি কেন্দ্রে গণনা হবে। ৩০টি নির্বাচনী জেলার প্রতিটিতে একটি করে গণনাকেন্দ্র থাকছে। শুধুমাত্র জয়পুর, যোধপুর-সহ তিনটি নির্বাচনী জেলায় দুটি গণনাকেন্দ্র আছে। সকাল আটটা থেকে ব্যালট পেপারের গণনা শুরু করা হবে। ৩০ মিনিট পরে খোলা হবে ইভিএম। সবমিলিয়ে ১,৮০০ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনের গণনা
হিন্দি বলয়ে ছত্তিশগড়ে মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা হল ৯০। অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগার ৪৬। এক্সিট পোলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গতবারের থেকে আসন সংখ্যা কমলেও এবার ক্ষমতা ধরে রাখবে কংগ্রেস। লড়াইটা বেশ কঠিন হবে। গণনার আগে আত্মবিশ্বাসী সুরে উপ-মুখ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেও বলেছেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে পর্যালোচনা করেছি। আমরা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে কংগ্রেস।’ তবে বিজেপির আশা, ইভিএম খুললে যাবতীয় হিসেব-নিকেশ পালটে যাবে।
সেই রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে রবিবার দিনটা নির্বাচন কমিশনের কাছেও চ্যালেঞ্জের। কারণ ৩৩টি জেলার মধ্যে একটি মাওবাদী প্রভাবিত জেলা। সেই পরিস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। সেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই ১,১৮১ জন প্রার্থীর ভাগ্যনির্ধারণ হবে। যে তালিকায় আছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী রামন সিং,লোকসভার বিজেপি সাংসদ বিজয় বাঘেল।
তেলাঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনের গণনা
২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে পৃথক তেলাঙ্গানা গঠিত হওয়ার পরে ভারতের কনিষ্ঠতম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিজের কাছে রেখেছেন কে চন্দ্রশেখর রাও। তবে প্রায় সবই এক্সিট পোলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার কুর্সি হাতছাড়া হতে চলেছে তাঁর। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে কংগ্রেস। যদি সেটাই হয়, তাহলে কর্ণাটকের পরে আরও একটি রাজ্যে ক্ষমতায় বসতে চলেছে হাত শিবির। অভিনেতা পবন কল্যাণের দল জনসেনার সঙ্গে জোট করেও বিজেপির অবস্থা একেবারেই সুবিধাজনক নয়।
দক্ষিণ ভারতের যে রাজ্যে মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ১১৯। অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগার হল ৬০। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার ২,২৯০ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। যে তালিকায় আছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর, তাঁর ছেলে কেটি রামা রাও, বিজেপির লোকসভার সাংসদ সঞ্জয় কুমাররা।