পঞ্চায়েত ভোটে দিনভর হিংসায় রাজ্য জুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। তবে এই হিসেব রাখা যেন দায়। গতকাল গভীর রাতে মিলল আরও এক মৃত্যুর খবর। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থেকে এক তৃণমূল কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে কুলতলির পশ্চিম গাবতলা এলাকায় ৯০ নম্বর বুথের কাছে। মৃত ব্যক্তির নাম আবু সালেম খাঁ। রাতেই সালেমের মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সালেমের মৃত্যু ঘিরে ঘনিয়েছে রহস্য। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনা প্রসঙ্গে জলাবেড়িয়া ২ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি ইয়ামিন মিস্ত্রির অভিযোগ, বুথ লুঠ করতে আশা বিরোধীরাই খুন করেছে সালেমকে। (পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় খবর এবং লাইভ আপডেট জানতে ক্লিক করুন এখানে)
এর আগে ভোটগ্রহণ চলাকালীন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে প্রাণ হারিয়েছিলেন এক ভোটার। মৃত ব্যক্তির নাম আনিসুর রহমান। দাবি করা হয়, তিনি তৃণমূল প্রার্থীর আত্মীয়। বোমার আঘাতে প্রাণ হারান তিনি। উল্লেখ্য, যুব ও তৃণমূলের মূল সংগঠনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এর আগেও বাসন্তীর মাটি রক্তে লাল হয়েছিল। সেখানে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল নিজে। ভোটের দিনও রক্তাক্ত হয় বাসন্তী। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দেয় ঘাসফুল শিবির। এদিকে গতকাল গোটা রাজ্যে যত জনের মৃত্যু ঘটেছে, তার মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে।
গতকাল নদিয়ার চাপড়ায় ভোট দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হামলায় মৃত্যু হয় তৃণমল কর্মী হামজার আলি হাসানের। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে তৃণমূলের বিদায়ী প্রধানের স্বামী মহম্মদ শাহেনশার মৃত্যু হয় দুষ্কৃতীদের হামলায়। হেমতাবাদেও তৃণমূল কর্মী নারায়ণ সরকারের নিথর দেহ মেলে। মালদার মানিকচকে তৃণমূল কর্মী শেখা মালেককে গুলি করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। এদিকে মুর্শিদাবাদের কাপাসডাঙায় বাবর আলি নামে এক তৃণমূল কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় ভোটের আগের রাতে। তাঁরও মৃত্য হয়। এছাড়া খড়গ্রাম ও রেজিনগরে দুই তৃণমূল কর্মী খুন হন বলে দাবি করা হয়।
যদিও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে, সন্ত্রাস বিরোধীরা করেছে। শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল অভিযোগ করে, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এবং আইএসএফ মিলিতভাবে সন্ত্রাস করেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের নারী এবং শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। ব্রাত্য বসু সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, 'দিনহাটা থেকে মালদা এবং রানিনগর থেকে রেজিনগর যাঁরা খুন হলেন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জানুন। কারা গুলি চালাল? কারা বোমা মারল? ব্যালট বাক্স কারা পুকুরে ফেলল?'এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যত হিংসার ঘটনা ঘটেছে এবং তার ফলে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী।'