তৃণমূল কংগ্রেস নাকি আসন্ন লোকসভা ভোটের জন্য কংগ্রেসকে এই রাজ্যে দু'টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। এহেন জল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। চ্যালেঞ্জের সুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, 'দয়ার ২টো আসন চাই না।' এই আবহে এবার কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানাচ্ছে, বাংলার জেলায় জেলায় সমীক্ষা চালিয়ে তৃণমূল স্তরে দলের অবস্থান খতিয়ে দেখা হবে। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতেই বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা করবে হাত শিবির। রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্ণাটক ভিত্তিক একটি ভোট কুশলী সংস্থাকে এই কাজে নিয়োগ করবে কংগ্রেস।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে আমাদের ২টি আসন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত তিনি। তাঁর এই দয়ার দান আমাদের চাই না। আমরা তাঁর এই প্রস্তাব নাকচ করছি।' বরং বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় তিনি বেশি আগ্রহী বলে স্পষ্ট করেছেন অধীর। এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অধীর সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, 'বহরমপুরে হারাবে বলছে, মালদায় হারাবে বলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি। যে কাউকে এখানে পাঠিয়ে দিন। যদি হারাতে পারেন, রাজনীতি করা ছেড়ে দেব। আপনি নিজে আসুন, দেখি কত ক্ষমতা আপনার।'
এদিকে অধীরের এই মন্তব্যের পরই নাকি প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে চলে এসেছিল দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বার্তা। বিধান ভবনকে নাকি খাড়গের বার্তা, এমন কোনও আচরণ করা যাবে না যাতে 'ইন্ডিয়া' জোট দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি নাকি আরও বলেছেন, জোট শরিকদের নিয়ে কোনওরকম নেতিবাচক আলোচনা করা যাবে না।
এর আগে অবশ্য সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় দলীয় সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে তৃণমূল। আর সারা দেশে লড়বে ইন্ডিয়া। বিশ্লেষকদের মতে, তখনই মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে বাংলায় হয়ত কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূল। যে দু'টি আসন ছাড়ার কথা উঠেছে, সেগুলি কংগ্রেসের গতবারের জেতা দুই আসন। এর আগে গত মাসে দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের পর রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে বাংলার অধিকাংশ কংগ্রেস নেতাই নাকি তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, বাংলায় নানা ভাবে কংগ্রেস ভাঙিয়েই মমতা শক্তিশালী হয়েছেন। তাছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের হাতে আক্রন্ত হচ্ছেন কংগ্রেস কর্মীরা। বঙ্গ কংগ্রেস নেতৃ্বের দাবি, উত্তরবঙ্গে অধিকাংশ জায়গায় তৃণমূলের থেকে কংগ্রেস শক্তিশালী। ফলে সেখানে জোটের সমীকরণ তৈরির অধিকার থাকা উচিত ছিল কংগ্রেসের।
এদিকে কংগ্রেস বিভিন্ন রাজ্যে আসন বণ্টনের বিষয়টি আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এই নিয়ে সম্প্রতি বলেন, 'জোট শরিকরা বারবার আসন রফার নিয়ে আলোচনা চাইছে। তাই আমরাও দ্রুতই খোলা মনে আসন রফার আলোচনা করব। কোনওভাবেই জোট ভাঙা চলবে না।'