কিষাণগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রটি বিহারের চল্লিশটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র। ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই কেন্দ্রটিতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এই কেন্দ্রটিতে কোনও সংরক্ষণ নেই। বাহাদুরগঞ্জ, ঠাকুরগঞ্জ, কিষাণগঞ্জ, গোচাধামান, আমৌর, বাইসি এই ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে কিষাণগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। লোকসভা নির্বাচনের ঐতিহাসিক ফলাফলের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায় এই কেন্দ্রটিতে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে সঙ্গে জনতা দল এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় জনতা দল গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহাম্মদ তাহির এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৬৭ সালে লক্ষণ লাল কাপুর প্রজার সোশ্যালিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে জয়ী হন। ১৯৭১ সালে জে রহমান জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রটি কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। হালিমুদ্দিন আহমেদ জনতা দলের পক্ষ থেকে জয়ী হন এই কেন্দ্রে। ১৯৮০ সাল ও ১৯৮৪ সালে অবশ্য ফের জামিলুর রহমান ফের একবার জয়ী হন এই কেন্দ্রে। ১৯৮০ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেস ইন্দিরা পন্থীর পক্ষ থেকে এবং পরেরবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়ী হন। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এম জে আকবর কিষাণগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯১ নির্বাচনের সৈয়দ শাহাবুদ্দিন জনতা দলের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করেন। ১৯৯৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাসলিমউদ্দিন জনতা দলের টিকিটে জয়ী হন। ১৯৯৭ সালে লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরবর্তীতে জনতা দলের একাংশ কর্মী সমর্থক আরজেডিতে যুক্ত হন।
১৯৯৮-এর নির্বাচনে তাসলিমউদ্দিন দ্বিতীয় বারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হন আরজেডির পক্ষ থেকে৷ ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে এস হোসেন এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের লোকসভায় রাষ্ট্রীয় জনতা দলের পক্ষ থেকে তাসলিমউদ্দিন ফের একবার জয়ী হন এই কেন্দ্র থেকে। বিহারের রাজ্য রাজনীতিতে ২০০৩ সালের নতুন আরেকটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয় নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে, জনতা দল ইউনাইটেডের জনসমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে আরজেডি এবং জেডি ইউর প্রার্থীকে হারিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহম্মদ আশরাফুল হক এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ৩৮.১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির দিলীপ কুমার জয়সওয়ালকে ২১ শতাংশ ভোটে পরাজিত করেন মহম্মদ আশরাফুল হক। ২০১৯ সালে জাতীয় কংগ্রেস তাদের আসনটি ধরে রাখে। মহাম্মদ জায়েদ কিষাণগঞ্জ কেন্দ্রটি থেকে জয়ী হন জেডিইউ এবং এআইএমআইএম-এর প্রার্থীদের পরাজিত করে।
কিষাণগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলির সর্বশেষ বিধানসভার ফলাফল এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। বাহাদুরগঞ্জ কেন্দ্রটিতে মোঃ আনসার নোয়ামি আরজেডির পক্ষ থেকে জয়ী হয়েছিলেন। ঠাকুরগঞ্জ এবং কোচাধামান কেন্দ্রদুটিতে এস আলম এবং মোঃ ইজাজ আসফি আরজেডির পক্ষ থেকে জয়ী হন। কিষানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রটিতে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ইজাহারুল হোসেন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন গত বিধানসভায়। অন্যদিকে আমৌর কেন্দ্রটিতে এআইএমআইএম-এর পক্ষ থেকে আখতারুল ঈমান বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিষাণগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে এবার মূল লড়াই কংগ্রেস ও জেডিইউ-এর মধ্যে।