দিদির রাজ্যে কাজ নেই। পেটের টানে মোদীর রাজ্যে। মুর্শিদাবাদ, মালদার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে দেখা গেল এই ছবি। বলা ভালো ভয়াবহ ছবি। ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক। কিন্তু আর তো কিছু করারও নেই! অগত্যা জীবনকে বাজি রেখে পেটের টানে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমিক।
ট্রেন বোঝাই করে বাংলা থেকে যাচ্ছে শ্রমিকের দল। কিন্তু কেন বছরের পর বছর ধরে এভাবে তাঁরা ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন?
মালদার চৌদুয়ার গ্রামে বসে কথা হচ্ছিল মণিরুল শেখ, হাসান শেখ, মহম্মদ জহিরুদ্দিনদের সঙ্গে। বিকাল বেলা চায়ের দোকানে অলসভাবে বসে রয়েছেন। এলাকায় ভোট প্রচারের ছিটেফোঁটাও নেই। কোথাও কোনও প্রচার, ফেস্টুন, পতাকা কিছুই নেই। ভোট নিয়ে কোনও আলোচনাও নেই এলাকায়। অনেকেই বলেন, নেতারা ভোটের সময় আসবেন। বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেবেন। ভোট মিটে গেলেই আর দেখা মিলবে না।
স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, প্রচার করার মতো এত পয়সা আমাদের নেই। আর তৃণমূল এখানে প্রচার করতে ভরসা পায় না। বিজেপিও আসে না। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গোটা গ্রাম। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষই পেটের টানে চলে গিয়েছেন ভিনরাজ্যে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমার দুই ছেলে। দুজনেই অন্য রাজ্যে কাজে গিয়েছে। পেটের টানে গিয়েছে। আমিও কাজে গিয়েছিলাম গুজরাটে। এখানে অনেকেই গুজরাটে কাজ করতে যায়। আসলে দিদির রাজ্য়ে কাজ নেই। বাধ্য হয়ে আমাদের মোদীর রাজ্যে কাজে যেতে হয়।
মালদা, মুর্শিদাবাদের একাধিক গ্রামে ঘুরে দেখা গেল এই ছবি। তবে কি এই বাংলায় একেবারেই কাজ নেই? পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশের দাবি, এই রাজ্যের কাজে পর্যাপ্ত মজুরি নেই। কৃষি কাজে যে মজুরি দেওয়া হয় তাতেও সংসার চলে না। কিন্তু ভিনরাজ্যে কাজ করলে যে মজুরি মেলে তাতে মোটামুটি দিন চলে যায়।
কত টাকা আয় হয় ভিনরাজ্য়ে?
শ্রমিকদের একাংশের দাবি, নানা ধরনের কাজে নানা ধরনের মজুরি থাকে। তবে মোটামুটি মাসের শেষে ২০-২২ হাজার টাকা আসে। তার একটা অংশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। সেই টাকাতেই সংসার চলে। পরিবার, পরিজনরা হাপিত্য়েশ করে বসে থাকেন কবে ফিরবে বাড়ির ছেলে।
ভোটের আগে কি মালদা, মুর্শিদাবাদে ফিরছে পরিযায়ী শ্রমিকদের দল?
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন এমন একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, মূলত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁরা ফেরেন। লোকসভা ভোট নিয়ে তাঁদের বিশেষ উৎসাহ থাকে না। ইদে যারা এসেছিলেন তাঁরা ভোটের আগেই ফিরে যাবেন ফের ভিনরাজ্যে।