আজ, শুক্রবার দ্বিতীয় দফার ভোট শুরু হয়েছে বাংলায়। তাই টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে দার্জিলিং, বালুরঘাট এবং রায়গঞ্জে। এই তিন লোকসভা কেন্দ্রে ভোট চলছে রুদ্ধশ্বাস গতিতে। তীব্র গরমে ভালই ভোট পড়ছে উত্তরবঙ্গের জেলায়। সকাল থেকে ভিড় দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় কমতে শুরু করেছে। কারণ পারদ যথেষ্ট বেড়েছে শিলিগুড়ি–সহ অন্যান্য লোকসভা কেন্দ্রে। এই তীব্র গরমের মধ্যেই দেখা গেল সৌজন্যের ছবি। একফ্রেমে চলে এলেন শিলিগুড়ির একদা গুরু–শিষ্য। আবার বলা যেতে পারে ভোট–বঙ্গে রাম–বাম মিশে গেল।
এই কথা বলা হচ্ছে কারণ আজ শুক্রবার ভোট দিতে যান প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তখন বুথের অদূরেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। একদা সিপিএমেই ছিলেন। অধুনা বিজেপিতে। ভোট দিতে আসার সময় হঠাৎ রাস্তায় পা হড়কে যায় অশোক ভট্টাচার্যের। আসলে হোঁচট খেলেন অশোকবাবু। এই ঘটনা দেখেই তড়িঘড়ি এগিয়ে আসেন শঙ্কর। আর পাশে দাঁড়িয়ে অশোকবাবুকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার লাগেনি তো?’ একদা শিষ্যকে গুরুর জবাব, ‘না লাগেনি।’
আরও পড়ুন: নেপাল–জাকির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অতীত, তৃণমূল সুপ্রিমোর বার্তায় এক হলেন যুযুধান দু’পক্ষ
নির্বাচন আসে নির্বাচন যায়। কিন্তু অতীত–বর্তমানের মেলবন্ধন, সৌজন্য, স্নেহ এবং ভালবাসা থেকে যায়। সেটা কখনও দেখা যায়। আবার কখনও দেখা না গিয়ে চরম হিংসার পথ বেছে নেয়। শঙ্কর ঘোষ বিজেপিতে চলে গেলেও অশোক ভট্টাচার্যের হৃদয়ে রয়ে গিয়েছেন। কারণ একদা শিষ্য ছিল শঙ্কর। তাই তো আজ গুরুকে হোঁচট খেতে দেখে এগিয়ে এলেন শঙ্কর। আর অশোক ভট্টাচার্যের কাছে আজকের ঘটনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ও ওর জন্য দাঁড়িয়েছে। আমি আমার জন্য ভোট দিতে যাচ্ছি। তার মধ্যে কী আছে। এখন আর গুরু–শিষ্য নেই। ওসব তো আগে ছিল। তবে মনে রেখেছে এটা ভাল।’
অভিমান ও ভালবাসা মেশানো কথা একদা গুরু বললেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি একদা শিষ্য শঙ্করের। আর শঙ্কর ঘোষকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আজকের বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘ওঁর সঙ্গে আমার ছোটবেলা থেকে স্মৃতি জড়িয়ে আছে। উনি তো আমার অভিভাবক। আগে যতটা ছিল, এখনও ততটাই সম্মান–শ্রদ্ধা আছে। আমি ওঁকে ভালবাসি। কাস্তে–হাতুড়ি–তারাকে এখন হাতের জন্য পোলিং এজেন্ট খুঁজে বসাতে হচ্ছে। আমি তো ওঁর শিষ্য। আমি সবসময় বলি উনি আমার রাজনৈতিক শিক্ষক ছিলেন।’ একটা সময় ছিল, যখন শিলিগুড়ির মুখ্যমন্ত্রী বলা হতো অশোক ভট্টাচার্যকে। তাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলেন আজকের এই বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। মেজাজে রাজত্ব করতেন। তবে তা ভেঙে পড়ে যায় ২০১১ সালে। ২০২১ সালের আগে শঙ্কর যোগ দেয় বিজেপিতে। আর এই গুরুকে হারিয়ে বিধায়ক হন শিষ্য।