রাহুল গান্ধীকে লোকসভা ভোটের আগে 'বড় পরামর্শ' দিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। তাঁর কথায়, লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কাঙ্খিত ফলাফল না পেলে রাহুল গান্ধীকে সরে দাঁড়ানোর কথা বিবেচনা করা উচিত। এক সময়ে প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে যোগান নিয়ে বেশ জল্পনা চলেছিল জাতীয় রাজনীতিতে। রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে একাধিকবার দেখাও করেছিলেন প্রশান্ত। তবে শেষ পর্যন্ত আর তিনি হাত শিবিরে যোগ দেননি। পরে বিহারে নিজেই 'জনসুরজ যাত্রা' শুরু করেন। পরবর্তীতে জনসুরজের মাধ্যমেই সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পিকে। এহেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রাহুলের উদ্দেশে বার্তা দিলেন, 'যদি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে না জেতা যায় তাহলে ওয়েনাড় থেকে জিতে কিছু হবে না।' (আরও পড়ুন: পূর্ব ভারতে 'চমক' দেখাবে BJP, বাংলাতে হবে অবাক করা ফল, বড় দাবি প্রশান্ত কিশোরের)
মোদী ও গান্ধীদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় ফারাক দেখাতে পিকে বলেন, 'গত পাঁচ বছরে তামিলনাড়ুতে মোদী কতবার গিয়েছেন আর সোনিয়া বা রাহুল গান্ধীরা সেখানে কতবার গিয়েছেন? আসনের লড়াই উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে। কিন্তু মণিপুর-মেঘালয় সফর করা হয়েছে। এভাবে কীভাবে সাফল্য আসবে।' সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিকে বলেন, 'আক্ষরিক অর্থেই রাহুল গান্ধী কংগ্রেস দলটিকে পরিচালনা করছেন। তাঁর অক্ষমতা সত্ত্বেও গত ১০ বছরে কংগ্রেস থেকে তিনি সরে যাননি বা অন্য কাউকে দল পরিচালনা করতে দেননি। আমার মাতে এটা অগণতান্ত্রিক।' এরপর রাহুলের উদ্দেশে পিকে-র বার্তা, 'আপনি যখন বিগত ১০ বছর ধরে একই কাজ করছেন, এবং তাতে কোনও সাফল্য আসছে না, তখন বিরতি নেওয়ার কোনও ক্ষতি নেই... অন্য কাউকে পাঁচ বছরের জন্য দল পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত আপনার। এই একই কাজ আপনার মা করেছিলেন।' রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর সোনিয়া সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেননি। সেই সময় কংগ্রেসের মাথায় ছিলেন পিভি নরসিমহা রাও। সেই কথাই তুলে ধরেন পিকে।
এরপর প্রশান্ত কিশোর আরও বলেন, 'সারা বিশ্বে ভালো নেতাদের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হল যে তাঁরা জানেন তাঁদের মধ্যে কীসের অভাব রয়েছে। এবং তাঁরা সেই অভাব পূরণ করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকেন। কিন্তু রাহুল গান্ধীর মনে হয় তিনি সব জানেন। আপনি যদি সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব না করতে পারেন তবে কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না। তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁর এমন একজনের প্রয়োজন, যিনি তাঁর কথা মতো কাজ করবেন এবং তাঁর ভাবনার বাস্তবায়ন করতে পারবেন। এটা সম্ভব নয়।' পিকে এরপর বলেন, 'ব্যক্তিগত স্তরে কথা বললে অনেক কংগ্রেস নেতাই স্বীকার করবেন যে xyz-কে না বলে দলের অভ্যন্তরে একটা কাজও করা যায় না। আবার কংগ্রেসের একাংশ এটাও মেনে নেবেন, রাহুলকে যে সব সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তাঁরা আশা করছেন, সেটা রাহুল গান্ধী করছেন না।'
তবে কংগ্রেস এখনও শেষ হয়নি বলে মত প্রশান্ত কিশোরের। তাঁর কথায়, '১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর থেকে ক্রমশ ক্ষয় হয়েছে কংগ্রেসের। তবে কংগ্রেসকে শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখা উচিত নয়। দেশে তাদের স্থান কখনও ধ্বংস হবে না। এইটা সম্ভব না। কংগ্রেস তার ইতিহাসে বহুবার বিকশিত হয়েছে এবং পুনর্জন্ম পেয়েছে।'