'দিল্লির মসনদের রাস্তা যায় উত্তরপ্রদেশ হয়ে', জাতীয় রাজনীতিতে এই কথাটি বহুলপ্রচলিত। দেশের অধিকাংশ প্রধানমন্ত্রী এই রাজ্য থেকেই সংসদে নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজে গুজরাটের হলেও এই রাজ্য থেকেই নির্বাচিত হয়ে সংসদে পা রেখেছিলেন প্রথমবার। ২০১৪ সালে গুজরাটের বরোদার পাশাপাশি বারাণসী থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন মোদী। সেবারে বারাণসী আসন থেকে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মোদীর বিরুদ্ধে। তবে মোদী জিতেছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে আরও বড় ব্যবধানে এই আসন থেকে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদী। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী তাই এখন 'মোদী গড়' হিসেবে পরিচিত। এবারও গেরুয়া শিবির তাঁকেই প্রার্থী করেছে এই আসন থেকে। দেশের বাকি সব লোকসভা আসনের সঙ্গে আজ বারাণসী আসনে ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঘোষণা করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীকে পরীক্ষায় বসতে হবে জুন মাসের ১ তারিখে। (আরও পড়ুন: আমাদের সাবসিডিয়ারি নয়, বন্ড তালিকায় তিনে থাকা সংস্থা নিয়ে সাফাই রিলায়েন্সের)
আরও পড়ুন: ২১৪৭৫টি সরকারি পদে নিয়োগের ঘোষণা, ভোট ঘোষণার আগেই একলাফে ৯% ডিএ বাড়ল এই রাজ্যে
এদিকে ২০১৪ সালে এখানে মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল আম আদমি পার্টি, বিএসপি, সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস। ২০১৯ সালেও এই আসনে মোদীর বিরুদ্ধে লড়েছিল সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস। তবে এবার ইন্ডিয়া জোটের চুক্তি অনুযায়ী, এই আসন থেকে কংগ্রেস লড়াই করবে সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে। তবে এখনও কংগ্রেস এই আসনের জন্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে এই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন অজয় রাই। এর আগে ২০০৯ সালেও তিনিই ছিলেন এই আসনের কংগ্রেস প্রার্থী। তবে এবারে মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস কাকে প্রার্থী করে, তা নিয়ে বেশ কৌতুহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। (আরও পড়ুন: লড়বেন প্রাক্তন CM-এর নাতি, বাংলার বাইরে তৃতীয় রাজ্যে প্রার্থী দিল তৃণমূল)
আরও পড়ুন: ৩০৩ সাংসদরা পেয়েছে ৬০০০ কোটি, বাকি ২৪২-এর পকেটে ১৪০০০ কোটি, 'বন্ড অঙ্ক' শাহের
এদিকে বারাণসী আসনটি সেই ১৯৯১ সাল থেকেই বিজেপির শক্ত গড় হিসেবে পরিচিত। মাঝে শুধুমাত্র ২০০৪ সালে এই আসনে কংগ্রেস জিতেছিল। মোদীর আগে এই বারাণসীর সাংসদ ছিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা মুরলি মনোহর যোশী। ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বারাণসীতে দু'টি কেন্দ্র ছিল (পূর্ব এবং পশ্চিম)। দুই আসনেই জিতেছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থীরা। বারাণসী পূর্ব থেকে জয়ী হয়েছিলেন রঘুনাথ সিং, বারাণসী পশ্চিম থেকে জয়ী হয়েছিলেন ত্রিভূবন নারায়ণ সিং। এরপর ১৯৫৭ সালে বারাণসী পূর্ব এবং পশ্চিম মিলে একটি লোকসভা আসন গঠিত হয়। ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালে এই আসন থেকে জেতেন কংগ্রেসেরই রঘুনাথ সিং। ১৯৬৭ সালে এই আসনে জিতেছিলেন সিপিএমের সত্য নারায়ণ সিং। এরপর ১৯৭১ সালে এই আসনে জয়ী হন কংগ্রেসের রাজারাম শাস্ত্রী, ১৯৭৭ সালে জয়ী হন জনতা পার্টির চন্দ্র শেখর, ১৯৮০ সালে জয়ী হন কংগ্রেসের কমলাপতী ত্রিপাঠী, ১৯৮৪ সালে শ্যামলাল যাদব, ১৯৮৯ সালে জনতা দলের অনিল শাস্ত্রী। (আরও পড়ুন: কর্মবিরতির ৫৫ দিনের বেতন দেওয়া হবে সরকারি কর্মীদের, রাজ্যে একলাফে ডিএ বেড়ে ২৩০%)
আরও পড়ুন: সন্দেশখালি, দুর্নীতি… তাও লোকসভা ভোটে বাংলায় এগিয়ে থাকবে তৃণমূল, দাবি সমীক্ষায়
এরপর ১৯৯১ সালে এই বারাণসী লোকসভা আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি শিরিশ চন্দ্র দিক্ষিত। ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ সালে টানা এই আসনে জয়ী হন বিজেপির শঙ্কর প্রসাজ জয়সওয়াল। ২০০৪ সালে এখানে হাত উঁচিয়ে জয়ী হন কংগ্রেসের রাজেশ কুমার মিশ্র। এরপর ২০০৯ সালে এখানে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির মুরলি মনোহর যোশী। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে এই আসন থেকে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
২০১৪ সালে বারাণসী লোকসভা কেন্দ্র থেকে নরেন্দ্র মোদী ৫ লাখ ৮১ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। শতাংশের নিরিখে যা ৫৬.৩৭। তাঁর নিকটম প্রতিদ্বন্দ্বী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেবারে এই আসন থেকে পেয়েছিলেন ২ লাখ ৯ হাজার (২০.৩০ শতাংশ) ভোট। কংগ্রেসের অজয় রাই তৃতীয় হয়েছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে মোদী বারাণসী থেকে পেয়েছিলেন ৬ লাখ ৭৪ হাজার (৬৩.৬২ শতাংশ) ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সমাজবাদী পার্টির শালিনী যাদব। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯৫ হাজার (১৮.৪০ শতাংশ) ভোট। সেবারও কংগ্রেসের অজয় রাই তৃতীয় স্থানে ছিলেন। এই আবহে এবারও এই আসন থেকে মোদী প্রথম থেকেই 'এগিয়ে আছেন' বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস কোনও প্রার্থীকে দাঁড় করায়, সেদিকে কৌতুহল রয়েছে সবার।