‘হাইভোল্টেজ’ নন্দীগ্রাম।মুখোমুখি যুযুধান দুই শিবিরের হেভিওয়েটদের সম্মুখসমরে ‘যুদ্ধ’। মমতা বন্দোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারী। একদিকে নন্দীগ্রামের আসনে লড়তে আজই হলদিয়ায় মনোনয়নপত্র পেশ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দোপাধ্যায়। অন্যদিকে নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু রোড শো করে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। সবমিলিয়ে পারদ চড়ছে নন্দীগ্রামের।
এই রাজ্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছ নন্দীগ্রাম। কারণ দীর্ঘ বাম জামানার অবসান ঘটিয়ে পরিবর্তনের সরকার আনার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল এই নন্দীগ্রাম৷ গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূল সু্প্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক হয়ে নন্দীগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে শুভেন্দু অধিকারী, তিনিই এ বার বিজেপিতে যোগ দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তাঁর একসময়ের নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে৷ সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে পালটা হুঙ্কারও ছেড়েছেন মমতা৷ তাঁর ভবানীপুরের আসন ত্যাগ করে নন্দীগ্রামে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেজন্য তিনি আগেইভাগেই নন্দীগ্রামের আসনে লড়ার ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। শুধু ঘোষণাই নয়, কথাও রেখেছেন তিনি। গত শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, এ বার তিনি শুধুমাত্র নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবেই লড়বেন৷ প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর মঙ্গলবারই নন্দীগ্রামে পৌঁছে গিয়েছেন মমতা৷ মাটি কামড়ে পড়ে থেকে প্রচারের জন্য সেখানে একটি বাড়িও ভাড়া নিয়েছেন তিনি।
বুধবার হলদিয়ায় মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷হলদিয়ার মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। দুপুর ১টা ৫২ মিনিট নাগাদ হলদিয়া মহকুমা শাসকের দফতরে পৌঁছন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দোপাধ্যায়। জেলাশাসকের উপস্থিতিতে নথিতে সই করেন তিনি। তারপর মনোনয়ন পত্রটি তুলে দেন জেলাশাসকের হাতে। ওদিকে জেলাশাসকের দফতরের বাইরে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছাসে মাতেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা।
এদিন হলদিয়া মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়নপত্র পেশ করে বেরিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘ আমি মনোনয়ন জমা দিলাম। চারজন আমাকে প্রস্তাবক করেছেন। সঙ্গে ছিলেন মহাদেব, স্বদেশ দাস, সুষমা ও আবদুর সামাদ।’ জনসংযোগ অভিযানের পর তৃণমূল নেত্রী বেলা ১২টা ৩০ মিনিট নাগাদ নন্দীগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছিলেন। পৌঁছান রেয়াপাড়ায় শিব মন্দিরে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দোলা সেনও। সেখানে পুজো দিয়েছেন তিনি।
এরপর দুপুর ১টা ৫২ মিনিট নাগাদ হলদিয়ায পৌঁছে মনোনয়ন পত্র পেশ করেন। ওদিকে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী ১২ মার্চ মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন পেশ করবেন বলে জানান৷ তিনি বলেন, ‘লুকোচুরির কিছু নেই। ১২ তারিখ নাগাদ মনোনয়ন পেশ করব। ওইদিন আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, বাবুল সুপ্রিয়কে আসতে অনুরোধ করেছি। এমনকী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও আসতে অনুরোধ করেছি। তিনি শুধু বক্তৃতা দিয়ে যাবেন। বাকিটা আমি ঘরের ছেলে আছি হয়ে যাবে।’
মমতাকে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘তুষ্টিকরণের রাজনীতি চলবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ নির্বাচনের সময় ডাবল বুথে ৮ জন করে থাকবেন। সিঙ্গল বুথে ৬জন করে।’ তিনি আরও বলেন, 'ও জিতলে গলায় টিকা কাটা, গলায় কণ্ঠি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। দড়ি ধরে মারো টান, রানি খান খান।'