এখন আর ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দ ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহার করা হয়ে থাকে, 'বিশেষভাবে সক্ষম' শব্দবন্ধটিকে। শব্দের বদল এলেও ভাবনার বদল কি এসেছে আমাদের? তাঁদের জন্য কতটুকু ভাবি আমরা? আজও কি তাঁদের বিনোদনের জন্য কিছু ভেবেছি সেই অর্থে? তাঁদের জন্য সিনেমা কিংবা থিয়েটারের কথা ভেবেছি? না। এখনও তেমনভাবে কিছু দেখা যায় না। তবে আমরা না ভাবলেও একটি দল ভেবেছে। জনসংস্কৃতি দেখিয়ে দিয়েছে এখন সক্ষম মানুষ যতটা পারে, ততটাই একজন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষও ততটাই পারেন।
৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ল্ড ডিসেবল ডে। সেদিন জনসংস্কৃতি ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি নাটকের আয়োজন করতে চলেছে। সেই নাটকে মোট ২৬ জন অংশ নিয়েছেন। এই ২৬ জন অভিনেতার মধ্যে ১৩ জন সক্ষম, আর ১৩ জন বিশেষভাবে সক্ষম। এঁরা একসঙ্গে রিহার্সাল করেছে, একসঙ্গে অভিনয় করেছে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে।
এই নাটকের ভাবনায় টিএস এলিয়টের কবিতা ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে মিলে মিশে গিয়েছে রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী, মহাভারত এবং কবি জসীমউদ্দীনের পদ্মা নদীর দেশে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের পূর্ব এবং উত্তর পূর্ব ভারতের ডিরেক্টর দেবাঞ্জন চক্রবর্তী এই বিষয়ে জানান, 'এটা ভারতে প্রথমবার হচ্ছে যে একই মঞ্চে সক্ষম এবং বিশেষভাবে সক্ষম অভিনেতারা অভিনয় করবেন। জনসংস্কৃতির সঞ্জয় গাঙ্গুলি, লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কালচারাল ডিরেক্টর এবং গ্রে নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা জেনি সিলি এবং মাইন্ড দ্য গ্যাপ থিয়েটার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা টিম হুুইলার মিলে এই নাটকটির পরিচালনা করেছেন।' তিনি আরও জানান, 'চ্যালেঞ্জ তো ছিলই, বুঝতেই পারছেন একসঙ্গে মূক-বধির, দৃষ্টিহীন, অটিস্টিক অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করা সহজ নয়। কিন্তু যা চ্যালেঞ্জ ছিল সেটা সহজেই কাটিয়ে ওঠা গিয়েছিল।'
এই নাটকের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক তাঁর কথায় উঠে আসে, তিনি জানান, 'যাঁরা মূকবধির তাঁদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাটকের অংশ হয়েই তাঁরা গোটা বিষয়টা ইন্টারপ্রেট করবেন।'
এই বিষয়ে জনসংস্কৃতির পরিচালক তথা প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয় গাঙ্গুলি জানান, 'এতদিন আমরা নিপীড়িতদের নিয়ে কাজ করছিলাম। তাঁদের অভিনয় করাতে শেখাচ্ছিলাম। কিন্তু সমাজে যাঁরা সব থেকে বেশি নিপীড়িত তাঁদের জন্য কিছু করা হয়নি। এবার তাঁদের নিয়েই কাজ করব। আমার দলে সক্ষম, বিশেষভাবে সক্ষম দুই ধরনের মানুষই থাকবে। আর মুক্তধারা ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে সেটার সূচনা হবে।'