বাঙালির প্রাণের মহানায়ক তিনি। তাঁর কোনও রিপ্লেসমেন্ট নেই। উত্তম কুমার বাঙালির আবেগ। তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ বাংলা সিনেমা। তাঁর জীবন নিয়েই পরিচালক প্রবীর রায় তৈরি করেছেন ‘যেতে নাহি দিব’। ৪ বছরের আইনি জটিলতা কাটিয়ে আজ (শুক্রবার) মুক্তির আলো দেখলো এই ছবি।
২০১৬ সাল থেকে মহানায়ককে নিয়ে এই ডকু-ফিচার তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন প্রবীর বাবু। ছবিতে মহানায়কের ভূমিকায় দেখা মিলেছে সুজন নীল মুখোপাধ্যায়ের। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ছবি মুক্তির দিনও নির্দিষ্ট ছিল। তবে বাধ সাধে পরিবার। আইনি নোটিশ ধরানো হয় পরিচালক-প্রযোজককে। পরিবারের অভিযোগ ছিল, এই ছবিতে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে মহানায়ককে। যা চমকে দিয়েছিল প্রবীর রায়কে। শুরুতে ছবির মুক্তিতে দু-মাসের ইনজাকশন জারি করা হয় পরিবারের তরফে। সেই লড়াই শেষ হয় অগস্ট মাসে। ছবির মুক্তিতে সম্মতি দেয় আদালত।
নিজের যৌবনকালে উত্তম কুমারের সান্নিধ্য পেয়েছেন ‘যেতে নাহি দিব’র পরিচালক প্রবীর রায়। ব্যক্তিগতভাবে মহানায়ককে চিনতেন তিনি, তাঁর জীবনের বহু অজানা কাহানি নিয়েই এই ছবি সাজিয়েছেন পরিচালক। মহানায়কের শৈশব থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত সময়কে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু উত্তম কুমারের পরিবারের তরফে এই ছবির বিরোধিতা করা হয়। শোনা যায়, শুরু থেকেই এই ছবিতে সুপ্রিয়া দেবীকে বাদ রাখার কথা জানিয়েছিল পরিবার, কিন্তু সুপ্রিয়া ছাড়া কি উত্তম কুমারকে নিয়ে কোনও ছবি তৈরি করা যায়? রাজি হননি পরিচালক। সেই শুরু দ্বন্দ্বের। পরিচালকের কথায়, ‘ওঁরা ছবি না দেখেই অভিযোগ করেছিলেন, আমি নাকি উত্তম কুমারকে বদনাম করছি! অগস্ট মাসে আদালতের রায় পেয়ে ছবিটা ১ সেপ্টেম্বর একটা হলে রিলিজ় করি। এ বার পুরোদমে ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে’।
এই ছবিতে উত্তমের চরিত্রের জন্য শুরুতে ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রবীরবাবু, তিনি রাজি হননি। পরে সুজন নীলের এক সানগ্লাস পরা ছবি দেখে তাঁর মনে হয় পর্দায় মহানায়ক হয়ে উঠতে পারবেন তিনি। পরিচালকের আশ্বাসবাণী, এই ছবিতে মহানায়কের জীবনের কোনও বিতর্ককে জায়াগা দেওয়া হয়নি। বরং দর্শক এই ছবিতে অজানা উত্তমকে খুঁজে পাবেন। তিনি জানান, ‘একটা কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি .... মহানায়কের রিপ্লেসমেন্ট হয় না...হবেও না। এ ছবির শিল্পীরা নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাত্র। বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে এ ছবি তৈরি করার চেষ্টা করেছি। ছবিটি দর্শক আনুকুল্য পাবে, এই ভরসা করি’।
মহানায়কের কোনও বিকল্প নেই তা জানেন সুজন। মহানায়ক হিসাবে তাঁর লুক থেকে কম কটাক্ষ ধেয়ে আসেনি। ট্রোলার উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘মানুষের বলার অধিকার আছে। তাই আলোচনা হোক, ক্ষতি নেই। আমার বিষয়টা খুব একটা খারাপ লাগছে না।’ ছবি দেখার পর দর্শকদের রায় মাথা পেতে নিতে আগ্রহী তিনি। এই ছবিতে সুপ্রিয়া দেবীর বেশি বয়সের চরিত্রে রয়েছেন মল্লিকা সিংহ রায়। কানন দেবীর চরিত্রে রয়েছেন শকুন্তলা বড়ুয়া। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে রয়েছেন পায়েল রায়। বিশেষ ভূমিকায় দেখা মিলবে স্বস্তিকা দত্ত ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।