ছবি: বাদামি হায়নার কবলে
পরিচালক: দেবালয় ভট্টাচার্য
অভিনয়ে: আবির চট্টোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রুতি দাস, গৌতম হালদার, প্রতীক দত্ত
রেটিং: ৩.৬/৫
ধুন্ধুমার অ্যাকশন, মানে সে একেবারেই ধুন্ধুমার অ্যাকশন। আর তখনই কিনা নেপথ্যে বেজে উঠল ‘ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে’! মানে সিনটা ভাবতে পারছেন একবার! হ্যাঁ এমনই আজগুবি দৃশ্যে ভরা স্বপনকুমারের বাদামি হায়নার কবলে। তবুও এতটুকু চোখের পাতা ফেলা যায় না, সরানো যায় না মনোযোগ। কিন্তু সবটা মিলিয়ে কেমন হল দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত এবং হইচইয়ের প্রথম ছবি বাদামি হায়নার কবলে? নতুন ডিটেকটিভের চরিত্রে আবির চট্টোপাধ্যায়ই বা কেমন?
বাদামি হায়নার কবলে ছবির গল্প
শহরে বাদামি হায়না এসেছে। কিন্তু সেটা কী কেউ জানে না। কিন্তু এটা যে শহরের জন্য বিপদজনক তা স্পষ্ট। আর তার থেকেই শহরকে বাঁচানোর দায়িত্ব এসে পড়েছে দীপক চ্যাটার্জির কাঁধে। কিন্তু বাঙালির চেনা অথচ অবহেলায় পড়ে থাকা এই গোয়েন্দা যে বর্তমানে সাধারণ একটি গার্ডের চাকরি করে সে এই দায়িত্ব নিতে নারাজ। তবুও কীভাবে সে জড়িয়ে পড়ে এই কেসে সেটাই দেখার। সঙ্গে আছে রোম্যান্টিকতার ছোঁয়া। আছে গাঁজাখুরি, উদ্ভট সব জিনিস পত্র যা আর চার পাঁচটা গোয়েন্দা গল্প তো বটেই অন্যান্য গল্পেও পাবেন না।
আরও পড়ুন: জিতেছেন অস্কার, তবুও একাধিকবার জীবন শেষ করে ফেলতে চেয়েছেন রহমান!
আরও পড়ুন: চিকেন কষাতেও লুকিয়ে রসায়ন! প্রকাশ্যে দেবশ্রীর কেমিস্ট্রি মাসির প্রথম ঝলক
কেন দেখবেন এই ছবি?
দেখুন ছবিটি ২ ঘণ্টা ২৬ মিনিটের এই ছবিটির প্রথম ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট কী ওমন সময় আপনি ভাবতেই পারেন এটা কী, কেন দেখছি.... ইত্যাদি প্রভৃতি। কিন্তু আসল চমক ওই শেষের কয়েক মিনিটেই। স্পষ্ট হয়ে যাবে গোটা গল্প। কিন্তু প্রথমে যতই উদ্ভট, মাথা মুণ্ডুহীন গল্প থাকুক না কেন এতটুকু বোর হবেন না। ফেরাতে পারবেন না চোখ। উল্টে কিছু কিছু জায়গায় চমকিত হবেন। এই যেমন ধরুন আপনি কি কোনও মারপিটের দৃশ্যে রবীন্দ্র সঙ্গীত বলা ভালো ‘ফুলে ফুলে’ নেপথ্যে সঙ্গীত হিসেবে ভাবতে পারেন? এখানে সেটাই ঘটেছে। আর এত সুন্দর সেই ব্লেন্ডিং হয়েছে যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে।
এই ছবির চরিত্রে নিজেই নিজের ভুল, খুঁতগুলো সবার সামনে তুলে ধরেছে যা এটিকে সবার থেকে আলাদা করে। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো বিশেষ ভাবে প্রশংসনীয়। কোনও অংশে কম যায় না এই ছবির গান বা সংলাপ। উদ্ভট কল্পনার সঙ্গে মিশে গিয়েছে ইতিহাস, হিউমার যেমনটা পাল্প ফিকশনে হয়ে থাকে আর কী! দেবালয়ের পরিচালনা আবারও মন কাড়ল।
আরও পড়ুন: দেব, বিক্রম, শাহরুখ, সৌরভ, অনুপম: সবার সঙ্গেই ডেটিংয়ে যেতে চান মধুমিতা! ব্যাপারটা কী?
আবির চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কী আর বলি! শহরে নতুন গোয়েন্দা এলে তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে যেন আজকাল আর ভাবাই যায় না। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, সোনাদার পর এবার দীপক চ্যাটার্জি হিসেবেও তিনি ফ্লাইং কালার্স নিয়ে পাশ করে গেলেন। তাসির চরিত্রে থাকা শ্রুতি দাস, রতনলালের চরিত্রে প্রতীক দত্ত যথাযথ। অল্প দৃশ্যে স্বমহিমায় ধরা দিলেন গৌতম হালদার। আর পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই বয়সেও যে একটার পর একটা ছবিতে এভাবে কাজ করে যে নজর কাড়ছেন সেটা অনবদ্য। বাস্তবের স্বপনকুমারের মতোই সাজ পোশাকে দেখা গেল তাঁকে।
তবে সব কিছুর মধ্যেও এই ছবিতে বেশ কিছু ফ্লজ আছে যা বাকি জিনিসগুলোর কারণে আব্বুলিশ করা যায়। তবে যুক্তি তর্ক বুদ্ধি বাইরে রেখে স্রেফ মজা আর বিনোদন পাওয়ার জন্য এই ছবি যদি হলে দেখতে যান তাহলে নিরাশ হবেন না কারণ এখানে পাল্প ফিকশনের আসল স্বাদকেই তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া আছে একাধিক মজার দৃশ্য। তাই প্রথম দিকে মনটা একটু কেমন কেমন করলেও যদি শেষ পর্যন্ত পরিচালক আর স্বপনকুমারের গল্পের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন একটা ভালো আড়াই ঘণ্টা উপহার পাবেন।