দু-দুবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। তবে একটা বিয়েতেও পাননি সুখ। প্রথম স্ত্রী তাঁর উপর এনেছিলেন গার্হস্থ্য হিংসের অভিযোগ। আর দ্বিতীয় স্ত্রী, উত্তম কুমারের নাতনি নবমিতার ছিল পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক। দুক্ষেত্রেই কোনও দোষ না থাকা সত্ত্বেও ভাস্বরকে শুনতে হয়, ‘ওর তো বিয়ে টেকে না। কেমন ছেলে কে জানে!’
এরকম আলোচনা হোক তাঁকে নিয়ে, একাবরেই পছন্দ নয় ভাস্বরের। আনন্দবাজারের কাছে তা নিয়ে মুখও খুললেন। জানালেন, ‘প্রথম বিয়ে ২০০৬ সালে। সম্বন্ধ করেই বিয়েটা হয়েছিল। টালিগঞ্জের বাসিন্দা, তবে ইন্ডাস্ট্রির কেউ নয়, নাম প্লাবনী মুখোপাধ্যায়। বিয়ের ৩ মাসের মাথায় জানতে পারলাম বাবা হতে চলেছি। স্বভাবিকভাবেই খুব আনন্দ হয়। তখন আমি লন্ডনে। বাড়ি ফিরবাম অনেক খুশি নিয়ে। কিন্তু দেখলাম, সব কেমন বদলে গিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে যেত। রাতে ফিরত দেরি করে। বলেছিল, বাড়ি থেকে জোর করে নাকি বিয়েটা দিয়েছে।’
‘এরপর একদিন হঠাৎ ওর পেট ব্যথা হয়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে জানতে পারি, ও গর্ভপাত করিয়েছে। তারপর বাবার বাড়ি চলে যায়। এরপরই আমার নামে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনে। দু দিন জেলে ছিলাম। গায়ে কালো দাগ করে, আমার নামে বলত আমি মেরেছি। এরপর আদালতে মামলা হল। আমি মামলাটা জিতেও গেলাম। কিন্তু বদনাম তো থেকেই গেল’, বলতে শোনা গেল ভাস্বরকে।
অভিনেতার দ্বিতীয়বার পাত্রী পান নবমিতা চট্টোপাধ্যায়কে। উত্তমকুমারের নাতনি, গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের বোন। এবার প্রেম করে বিয়ে। ২০০৩ থেকে চানাজানা। ২০১৩ সালে সেন্সর বোর্ডের সদস্য যখন দুজন, তখন তৈরি হয় ভালোলাগা। তবে এবারেও টিকল না সেই সম্পর্ক। ভাস্বর জানান, বিশাখাপত্তনমে হানিমুনে গিয়ে নবমিতা তাঁকেকে বলে যে, সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। বাড়ির চাপে বলতে পারেনি। ভিনেতা অবাক হয়ে বলেছিলেন, আমায় বললে আমিই তো ভেঙে দিতাম বিয়েটা! যাই হোক, একসঙ্গে থাকতে রাজি হন উত্তমের নাতনি। একসঙ্গে দুজনে তখন একাধিক অনুষ্ঠানেও যেতেন। ভিতরে ভিতরে সব ঠিক না থাকলেও, বাইরে আসতে দেননি।
এরপর নবমিতাই দাবি করেন, তিনি আর ভাস্বরের সঙ্গে ছবি তুলবেন না। আর তুললেও তা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়া যাবে না। কারণ তাতে তাঁর প্রেমিক কষ্ট পায়। তাতেও রাজি হয়ে যান তিনি। তবে এরপর ভাস্বরের কাছে শর্ত এসেছিল, ছাড়তে হবে মা-বাবাকে। সেই সময় ডায়ালেসিস চলছে অভিনেতার মায়ের। সেই শর্তে আর রাজি হতে পারেননি।
ভাস্বর জানান, বারবার ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন নবমিতা তাঁকে। লোকের সামনে অপমান করত। প্রেমিকের সঙ্গে একদিন মাঝরাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েও গিয়েছিল। আবার ফিরেও আসত। এভাবেই কাটছিল জীবনটা। নবমিতা সাফ জানিয়েছিলেন, সন্তান নিতে চান না! এমনকী, মেয়ের ব্যবহারে ফোন করে ক্ষমাও চেয়েছিলেন নবমিতার মা।
করোনা লকডাউনের সময় ডিভোর্সের মামলা যায় কোর্টে। স্ত্রীর কাছে ভাস্বরের অনুরোধ ছিল, সে যেন ব্যাপারটা গোপন রাখে। তবে মানেননি নবমিতা। জানিয়ে দেন সকলকে। আপাতত আইনত দুজনে আলাদা। ভাস্বরের দাবি, ডিভোর্সের পর নবমিতা বলেছিলেন ‘আরও একবার’ ভেবে দেখার কথা। তবে আর সেই পথে যতে চান না তিনি। দ্বিতীয় বিয়ে ভাঙার পর, আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। অনেক কষ্টে, বেরিয়েছেন সেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে। আপাতত অভিনয়, বই লেখা নিয়েই তাঁর জগত। আর সুযোগ পেলেই চলে যান কাশ্মীরে।