টলিউড ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ অনুভব কাঞ্জিলাল। ২০১৮ সালে ‘আবার বসন্ত বিলাপ’ দিয়ে সিনেমায় হাতেখড়ি। এরপর ‘অব্যক্ত’, ‘সহবাসে’র মতো ছবিতে কাজ করেছেন। হইচই-এর সম্পূর্ণা সিরিজ নেতিবাচক চরিত্রে নজর কেড়েছেন। দিল্লি বড় হয়েছেন অনুভব। বাবা অঞ্জন কাঞ্জিলাল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যবেক্তিত্ব। বাবার থিয়েটার দলের সঙ্গেই অভিনয় সফর শুরু করেছিলেন। প্রথমবার টেলিভিশনের পর্দায় অনুভব কাঞ্জিলাল। জি বাংলার ‘মিলি’ ধারাবাহিকে মুখ্য ভূমিকায়। সোমবার থেকে সম্প্রচার শুরু ‘মিলি’র, শ্যুটিংয়ের ব্যস্তার ফাঁকেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা জমালেন নায়ক। আরও পড়ুন-বিয়ের মণ্ডপে চলল গুলি, অপহৃত নতুন বউ, তারপর? নতুন সিরিয়াল 'মিলি' আসার আগেই দেখুন শ্যুটিংয়ের দৃশ্য…
সিনেমা থেকে সিরিয়ালে আসা এখন ইন্ডাস্ট্রির নতুন ট্রেন্ড! সেটাই ফলো করলেন?
অনুভব: বহু বছর আমি থিয়েটার করেছি, তারপর সিনেমায় আসি। টেলিভিশন এমন একটা মিডিয়ায় যেটা আমার অজানা-অচেনা ছিল। আমি গত বছর অনেক ছবি, ওয়েব সিরিজ শ্যুট করেছি। সেগুলো মুক্তির অপেক্ষায়। আমি যে ধরণের চরিত্র করতে চাইছিলাম, ছবির সেই চিত্রনাট্য আমি পাচ্ছিলাম না। ইতিমধ্যেই আমার কাছে ‘মিলি’র অফার আসে। তখন মনে হল আমার এই নতুন চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করা উচিত। রোজ শ্যুটিংয়ের পরিবেশে থাকতে পারাটা বড় পাওনা। এমনি এখন টলিউডে কম কাজ হচ্ছে, কারণ যে ধরণের কাজ করতে চাইছি সেটা পাচ্ছি না। মিলি পুরোদস্তুর কর্মাশিয়াল জোনের একটা কাজ। আমি অ্যাকশন করতে পারছি, রোম্যান্স করতে পারছি! তাছাড়া জি বাংলার তো চ্যানেল এবং এইরকম একটা প্রাইম স্লট, সব মিলিয়ে দারুণ সুযোগ।
তাহলে বলছেন নতুনদের জন্য সিনেমায় সুযোগ কম?
অনুভব: সত্যি বলতে কনটেন্টের অভাব তো রয়েছে। বড় হাউসের কিছু ফিক্সড কাস্টিং রয়েছে। আমাদের মতো অভিনেতা যাঁদের সংসার খরচ চলে অভিনয় করেই, তাদের জন্য সেটা সমস্যাজনক। রেগুলার বেসিসে যে কাজগুলো হাতে আসে সেগুলো করতে ইচ্ছে করে না। যা পাব তাই করব এই ভাবনা আমার নয়, কারণ ওই চরিত্রগুলোর মধ্যে কোনও দম নেই। আর আমি নিজেকে সত্যি এক্সক্লুসিভ রাখতে চাই।
এখন ওম, অনুশা (বিশ্বনাথন) সকলে টেলিভিশনে। শুনলাম অঙ্গনাও (রায়) আসছে। তাদের আসার কারণ আমি বলতে পারব না। তবে আমার মনে যারা নিয়মিত কাজ করছে তাঁদের টেলিভিশন তিনটে জিনিস দিচ্ছে- এক) আমি জানি আমার মাসের শেষে কত টাকা আসবে দুই) আমি পছন্দের চরিত্র করতে পারছি আর তিন) আমি আরও বেশি সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পাচ্ছি। দিনের শেষে একজন অভিনেতা এই তিনটে জিনিসের জন্যই কাজ করে- যে চরিত্রটা করছে সেটা যেন তৃপ্তি দেয়, একটু টাকা হাতে আসে আর অবশ্যই পরিচিতি পাওয়া। যদি অন্য কেউ অন্য কথা বলে সেটা মিথ্যে। আমি তো তিনটে জিনিসই পাচ্ছি টেলিভিশনে, তাহলে লজিক্যালি আমার মনে হয় এটা জরুরি সিদ্ধান্ত। ৩০ বছর বয়স পার করার আগে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে চাই।
প্রথম প্রোমোয় মিলির নায়কের নাম ছিল সূর্য, হঠাৎ করে বদলে গেল কেন?
অনুভব: এই রে! (হাসি) সিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রিতে হিরোর নাম নিয়ে এত ইস্যু রয়েছে সেটা আমি জানা ছিল না। এটা ঠিক শুরুতে এই চরিত্রের নাম সূর্য ছিল। প্রথম প্রোমো ওই নামেই শ্যুট হয়েছিল। আসলে আমাদের সিরিয়ালের আশেপাশের স্লটে একটি সিরিয়াল (অনুরাগের ছোঁয়া) রয়েছে তাঁর লিড হিরোর অনস্ক্রিন নাম সূর্য। আমি যদিও সিরিয়ালটা দেখিনি, শুনেছি খুব জনপ্রিয়। পাশাপাশি স্লটে মূল চরিত্রের নাম একই, এই বিষয়টা একটু অদ্ভূত তো বটেই। হয়তো সেই ভাবনা থেকেই পরিবর্তন। এখন মিলির নায়ক অর্জুন। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই চরিত্রের সঙ্গে অর্জুন নামটাই বেশি মানানসই।
অনুভবের চোখে অর্জুন কেমন?
অনুভব: অর্জুনকে এক কথায় বলতে গেলে বলব- ‘রবিনহুড’। ওর এলাকাতে ওকে সবাই খুব মেনে চলে, ও যেটা বলে সেটাই ফাইনাল। ভীষণরকম রাগী, নিঃসন্দেহে সত্তরের দশকের অ্যাংরি ইয়াংম্যানের ছাপ রয়েছে। এই মেয়েটার প্রতি ওর একটা সফট কর্নারও তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি একটা প্রতিশোধের ট্র্যাকও রয়েছে।
সিনেমার থেকে টেলিভিশন মিডিয়ামটা কতটা আলাদা মনে হচ্ছে?
অনুভব: দুটো মাধ্যম একদম অন্যরকম। শট ডিভিশন, শ্যুটিংয়ের ধরন সবটাই টেলিভিশনে আলাদা। সিনেমায় অনেক রিল্যাক্স মুডে কাজ হয়। সবচেয়ে বড় কথা সিনেমায় আমরা শুরুটা আর শেষটা জানি, কিন্তু এখানে তেমনটা হয়। এখানে প্রতিদিন এতকিছু হচ্ছে, সবটা মাথায় রাখা বেশি চ্যালেঞ্জিং, খাটনিটা অনেক বেশি। আমি তো থিয়েটার থেকে সিনেমায় এসেছি। আমার সে জায়গায় দাঁড়িয়ে মনে হয়, এই মুহূর্তে টেলিভিশন সবচেয়ে কঠিন মিডিয়াম। প্রতিদিন যে পরিমাণ পরিশ্রম এখানে করতে হয়, সেটা খুব চ্যালেঞ্জিং। মাসের পর মাস একটা গল্প ধরে রাখা, চরিত্রগুলোকে ধরে রাখা খুব কঠিন।
পর্দার মিলি মানে খেয়ালির সঙ্গে সমীকরণ কতটা জমলো?
অনুভব: খেয়ালির সঙ্গে আমার এর মধ্যেই দারুণ বন্ডিং হয়ে গিয়েছে। আমার তো মাঝেমধ্যে মনে হয় ওকে অনেক বছর ধরে চিনি। বয়সটা খুব কম কিন্তু ও খুব পরিণত, খুব পরিশ্রমী মেয়ে। এর আগে ও যে সিরিয়ালটা করেছ সেটাও খুব জনপ্রিয়। ও খুব কনফিডেন্ট মেয়ে, এমনিও খুব ভালো মেয়ে। আমাদের রসায়ন আসা করছি দর্শকরা পছন্দ করবে।
‘মিলি’র সঙ্গে একই দিনে একই স্লটে শুরু হচ্ছে অপরাজিতা আঢ্যর জল থই থই ভালোবাসা, শুনেছেন নিশ্চয়। কেমনভাবে দেখছেন এই প্রতিযোগিতা?
অনুভব: আমি কম্পিটিশন হিসাবে একদম দেখছি না। দুটো একদম অন্যরকম বিষয়বস্তু নিয়ে এই সিরিয়ালটা। আমার মনে হয়, দুটো সিরিয়ালের দর্শকও একটু আলাদা হবেন। এটার গ্র্যাঞ্জার বা অ্যাকশন সেটা একদম অন্যরকম আরেকটা সিরিয়ালের থেকে। মানছি ওই সিরিয়ালের কাস্টিং-এ অনেকে অভিজ্ঞ তবে মিলির মতো সিরিয়াল আগে কখনও হয়নি। এইরকম বড় বড় অ্যাকশন সিকুয়েন্স বাংলা টেলিভিশনের পর্দায় আগে হয়নি, সেটা আমি সবার থেকে শুনছি। মিলি নিয়ে খুব আমি সিকিওরড রয়েছি, আমার একদম মনে হয় না চিন্তার কোনও কারণ রয়েছে। লোকে অন্য সিরিয়ালটাও দেখুক, তবে ওটিটির পর্দায়। টেলিভিশনে রাত ৯টায় যেন সকলে মিলি-ই দেখে, টিআরপিটা যেন আমরাই পাই। (হাসি)
সোশ্যাল মিডিয়ায় আদৃতের সঙ্গে তুলনা চলছে, উনিও সিনেমা থেকে ছোটপর্দায় এসেছিলেন। এই তুলনা নিয়ে আপনার কী মত?
অনুভব: আদৃত খুব ট্যালেন্টেড ছেলে। আমি ওকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। সিনেমাতেও ওর কাজ আমার খুব ভালো লাগত। আমার মনে হয় যে সময় আদৃত ওই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিল সেটা বেস্ট ডিসিশন ছিল ওর জন্য। আমার বুঝতে একটু সময় লেগে গিয়েছে। আসলে ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর কোথাউ একটা স্টিগমা কাজ করে টেলিভিশন নিয়ে, যেটা আদতে কিন্তু ভুল। সিনেমার প্রতি একটা অবসেশন কাজ করে, সেটা ভাঙতে সময় লাগল। এখন আমি নিজের পছন্দের চরিত্র করতে পারছি, যে পরিশ্রমটা করছি মাসের শেষে তার ফল পাচ্ছি। তবে আদৃতের সঙ্গে তুলনার কোনও জায়গা নেই। ও জি বাংলায় একটা ফাটিয়ে শো করেছে ‘মিঠাই’, আর আমারও আশা করছি একটা ফাটিয়ে শো করব!