বুধবার ঘোষণা করা হল ৬৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর পুরস্কার মঞ্চে সেরা বাংলা ছবির পুরস্কার উঠবে কার হাতে? সেই নিয়ে চলছিল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা। শিকে ছিঁড়ল তরুণ পরিচালক জুটি রাজদীপ পাল ও শর্মিষ্ঠা মাইতির। তাঁদের ছবি ‘কালকক্ষ’ সেরা বাংলা ছবি হিসাবে চমকে দিল। করোনা আবহকে প্রেক্ষাপটে এক বাঙালি পরিবারের সংকট এই ছবির মূল উপজীব্য, আর তাতেই বাজিমাত। জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে বাংলার হয়ে নজর কেড়ে উচ্ছ্বসিত পরিচালক শর্মিষ্ঠা মাইতি ও রাজদীপ পাল। টলিউডের রথী-মহারথীদের পিছনে ফেলেছেন তাঁরা। আরও পড়ুন-কঙ্গনাকে হারিয়ে সেরা আলিয়া-কৃতি, RRR-এর হার ‘আন্ডারডগ’ রকেট্রি-র কাছে
একাধিক ফিল্মফেস্টিভ্যালে নজর কাড়া এই ছবি মুক্তির পর বক্স অফিসে সে-ভাবে সাড়া ফেলেনি। এক কথায় বড় ব্যানারের ছবির ভিড়ে হারিয়ে গেছে। অথচ ‘কালকক্ষ’ই বিরাট সম্মান এনে দিল বাংলাকে। তবে আক্ষেপ ভুলে আজ উচ্ছ্বাস রাজীপের কন্ঠে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে পরিচালক বললেন, ‘কালকে ভারত চাঁদে ল্যান্ড করেছে আর আজকে আমরা চাঁদের উপরে উঠে গিয়েছি। একেবারেই অবিশ্বাস্য, দারুণ অনুভূতি। এটা আমাদের দ্বিতীয় জাতীয় পুরস্কার, আগেরটা ডেবিউ ডকুমেন্ট্রির জন্য ছিল, এটা ডেবিউ ফিচারের জন্য। দেশে-বিদেশে সর্বত্রই কালকক্ষ সমাদৃত হয়েছে কিন্তু সেরা বাংলা ভাষার ছবি হিসাবে জাতীয় পুরস্কার, এর সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হবে না।’
সহজ ছিল না ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার হিসাবে কালকক্ষ তৈরি করা। সেই লড়াইটা আজ বড্ড মনে পড়ছে রাজদীপের। বললেন, ‘বাংলায় ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার হিসাবে ছবি তৈরিটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। টাকা জোগাড় করাটা সহজ নয়, তবে তার চেয়েও কঠিন ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। তাই প্রযোজকরা পিছিয়ে আসেন। নিজের শর্তে ছবি তৈরি খুবই কঠিন। এখানে তো কমার্শিয়াল ছবির নামে খাজা চালানো হয়, আর্ট ফিল্মের নামেও হয় অবশ্য। তবে আমাদের সততার সঙ্গে ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন অঞ্জনদা (অরোরা ফিল্মসের কর্ণধার অঞ্জন বসু)’।
টিভির পর্দায় কালকক্ষর নাম ঘোষণা হতেই পার্টনার রাজদীপকে ফোন করেন শর্মিষ্ঠা। চোখের জল যেন বাঁধ মানছে না। খুশির সঙ্গে আক্ষেপ ঝরে পড়ল তাঁর গলায়। পরিচালক জানালেন- ‘এই ছবিটাকেই নন্দন ২ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। বড় প্রযোজনার ছবি নিয়ে ব্যস্ত তখন সিনেপাড়া। বাংলার দর্শক হয়তো ছবির নামটাই ভুলে গিয়েছিল। বাংলার দর্শককে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
এই ছবির বিষয়বস্তুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে করোনা অতিমারীর ভয়ঙ্কর সময় এবং একঘরে-বিচ্ছিন্ন মানুষের জীবনের বাস্তব ছবি উঠে এসেছে কালকক্ষ-এ। এখনও ওটিটি-তে মুক্তি পায়নি এই ছবি। পুরস্কার জয়ের পর নিশ্চয় প্রযোজক ওটিটি-তে মুক্তির কথা ভাববেন, আশাবাদী রাজদীপ।