ধর্ষণ করে চিরে দেওয়া হয়েছিল ডিরোজিও কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর দেহ। সালটা ২০১৩। কামদুনির সেই কন্যের গণধর্ষষণ ও খুনের মামলায় শুক্রবার রায় দিল হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত তিন জন, শরিফুল আলি, আনসার আলি ও আমিন আলি – র মৃত্যুদণ্ড মুকুব করে হাইকোর্ট। ১০ বছর পুরোনো এই ঘটনায় এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বেকসুর খালাস হয়ে গেল আমিল আলি। বাকি দু’জন আনসার আলি ও শরিফুল আলির আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
কামদুনির গণধর্ষণ এবং খুনের মামলায় শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা নিয়ে শোরগোল সবমহলে। এই রায়ে হতাশ কামদুনি, মৌসুমী-টুম্পারা, রাস্তায় শুয়ে কাঁদলেন তাঁরা। একটা সময় কামদুনি আনন্দোল নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলার সাংস্কৃতিকমহলকে। বুদ্ধিজীবীরা সরব হয়েছিলেন নির্যাতিতা তরুণীর সুবিচার চেয়ে।
কামদুনির ঘটনায় প্রতিবাদের সুর চড়িয়েছিলেন কৌশিক সেন। এদিন আনন্দবাজারকে তিনি জানান, ‘আমরা তখন ওখানে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। মিটিং-মিছিলও করেছি। এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেককেই চিনি। একটু হলেও খারাপ লাগছে। কারণ, আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেয়। পুলিশ বা প্রশাসন সেই প্রমাণ কতটা সঠিক ভাবে আদালতের হাতে তুলে দিয়েছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।’ পাশাপাশি কৌশিকের সংযোজন, ‘আসলে খবরের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে কামদুনি। দীর্ঘ মামলার কী পরিস্থিতি বা সেই পরিবারটা ঠিক ভাবে লড়াই করতে পারছে কি না, আমরা তো তার কোনও খবরই রাখি না। সমাজকে দোষ দেওয়ার তুলনায় আমি তো নিজেকে আগে দোষ দিতে চাই। কারণ নিয়মিত খবর রাখতে পারিনি। আমি লজ্জিত।’
কৌশিকের মতোই কামদুনি কাণ্ড নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে হতাশা ঝড়ে পড়ল রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। তিনি সরাসরি বলেন, ‘ফাঁসির আসামি বেকসুর খালাস পাচ্ছে, এটা তো চিন্তার বিষয়। এই রায় নিঃসন্দেহে মহিলাদের সুরক্ষাকে আরও একটু পিছিয়ে দিল।’
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন কামদুনি কাণ্ড নিয়ে রায় ঘোষণা করলেন। নির্যাতিতার বান্ধবী টুম্পা হতাশ। আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমাদের বন্ধুর জন্য আমরা সেই ২০১৩ সাল থেকে লড়াই করছি। আমরা অনেক কিছু সহ্য করেছি। কিন্তু এত বছর অপেক্ষা করে কী হল! প্রমাণ হল এই রাজ্যে কোনও বিচার নেই। কিন্তু এখানে আমরা থেমে যাব না'। সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানাবে মমতা সরকার।