‘আই অ্যাম স্য়াড টু সে আই অ্যাম অন মাই ওয়ে… ওন্ট বি ব্য়াক ফর মেনি এ ডে’-- অনেক দিন নয়, চিরকালের মতো বিদায় নিলেন হ্যারি বেলাফন্টে। রক মঙ্গলবার থেমে গেল ‘জামাইকা ফেয়ারওয়েল’-এর স্রষ্টার সুর। এদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপার ওয়েস্ট সাইডের বাডিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নবতিপর গায়ক।
পঞ্চাশের দশকে তাঁর গণসংগীত আলোড়ন ফেলেছিল গোটা বিশ্বে। জাতিগত বিভেদের আগল ভেঙে দিয়েছিলেন হ্যারি বেলাফন্টে। শুধু গায়ক হিসাবেই পরিচিতি পাননি বেলাফন্টে। আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের বেড়া ভাঙতে নিজের গানকে হাতিয়ার করেছিলেন শিল্পী। নাগরিক আন্দোলন অন্যমাত্রা পেয়েছিল তাঁর সুরময় সৃষ্টিতে। একটা সময় যখন মার্কিন মুলুকে গায়ের রং নিয়ে বিভেদ মাথাচাড়া দিয়েছিল ব্যাপক হারে, কালো-চামড়ার মানুষদের দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল তখন সেই বৈষম্যের বেড়াজাল ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রয়াত গায়ক।
বেলাফন্টের মুখপাত্র কেন সানশাইন (Ken Sunshin) এদিন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯৬ বছর বয়সী শিল্পীর।
নিউ ইয়র্ক সিটির হার্লেমের এক জামাইকান অভিবাসী পরিবারে জন্ম (১৯২৭, ১লা মার্চ) শিল্পীর। দারিদ্রতা ছিল নিত্যসঙ্গী। সঙ্গীতের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায় ক্যারিবিয়ান-আমেরিকান শিল্পীদের মধ্যে হ্যারি বেলাফন্টেই সফলতম। সঙ্গীতে সাদা-কালোর বিভাজন ধুয়ে-মুছে দিয়েছিলেন বেলাফন্টে। আতলান্টিকের দু-পারেই ঝড় তুলেছে তাঁর ক্য়ারেবিয়ান সঙ্গীত। তাঁর কনসার্টে উপচে পড়ত জনসমুদ্র।
জামাইকান মেন্টো লোকগানের সঙ্গে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ক্যালিপসোর স্টাইলকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন শিল্পী। ‘Day-O’ (দ্য বানানা বোট সং)-এর পর একে একে ‘জামাইকা ফেয়ারওয়েল’ বা ‘ক্যালিপসো’-র মতো কালজয়ী অ্যালবাম শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন তিনি। আমেরিকা, ইউরোপের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই সকল গান ঝড় তুলেছে ভারতেও। বিলবোর্ড চার্টে একটানা ৩১ সপ্তাহ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল ‘ক্যালিপসো’। তাঁর গানে বুঁদ থেকেছে গোটা বিশ্ব। পঞ্চাশের দশকে সবচেয়ে বেশি আয় করা কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী ছিলেন বেলাফন্টে। ‘শেক শেক সেনোরা’, ‘ম্যাটিল্ডা’, ‘লিড ম্যান হোলার’,‘জাম্প ইন দ্য লাইন’-র মতো অজস্র গান হ্যারি বেলাফন্টের কিছু ঐতিহাসিক সৃষ্টি। তাঁর মৃত্যুতে মন খারাপ বাংলার। শোকপ্রকাশ করেছেন শ্রীজাত, অঞ্জন দত্ত-সহ অনেকেই।
এদিন শ্রীজাত সোশ্যালে লেখেন, ‘খুব কম মানুষই পারে, এক জীবনে প্রবাদ বা রূপকথা হয়ে উঠতে। খুব কম মানুষই পারে, হাত থেকে হাতে ইশতেহার বা নিশানের মতো ঘুরতে। খুব কম মানুষই পারে, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে জাগিয়ে রাখতে। আপনি সেই বিরলদের একজন। বিদায় হ্যারি, অবশেষে ফেয়ারওয়েল। এই পৃথিবী আপনাকে আর আপনার গানকে ভুলবে না।’
পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লেখেন, ‘হ্যারি বেলাফোন্তে জামাইকা ফেয়ারওয়েল, তোমাকে বিদায় কি করে জানাবো। তুমি তো হৃদয় জুড়ে আছো আর থাকবে। ভালো থাকবেন।’
অঞ্জন দত্ত শোকপ্রকাশ করে লেখেন, ‘৯৭ বছর বয়সে একজন বড়মাপের শিল্পী আজ চলে গেলেন। ওঁনার কন্ঠস্বর শুনেই আমরা বড় হয়েছি…. পল রবসনের ভাবশিষ্য, সফল সঙ্গীত তারকা হওয়ার পাশাপাশি উনি ছিলেন একজন বড় মনের মানুষ, সমাজকর্মী….’।
সুদর্শন বেলাফন্টের কাছে একটা সময় ছবির অফার এসেছে বিস্তর। হলিউড অভিনেতা হিসাবেও সাফল্য় ঝুলিতে আসে তাঁর। তবে অভিনয় কোনওদিনই তাঁর ভালোবাসা হয়ে ওঠতে পারেনি, তাই গায়েকির জগতেই ফিরে আসেন বেলাফন্টে। তাঁর মৃত্যুতে আজ এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।