শুক্রবার মুক্তি পেল মধুমিতা সরকার,অপরাজিতা আঢ্য অভিনীত ‘চিনি ২’। যদিও ছবির মুক্তির দিন শহরে নেই মধুমিতা। অরুণাচলের পাহাড়ে ‘কে প্রথম কাছে ডেকেছি’র শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত ‘চিনি’। শ্যুটিং-এর ফাঁকেই হিন্দুস্তান টাইম বাংলার প্রতিনিধির সঙ্গে অকপটে আড্ডা দিলে মধুমিতা সরকার। চিনি ২-র অভিজ্ঞতা থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আনকাট অভিনেত্রী।
এখন তো পাহাড়ে শ্যুটিং করছো, তবে ইন্ডাস্ট্রিতে লোকজন বলছে আজকাল মধুমিতার সমতলে পা পড়ে না, পাহাড়েই থাকে। সত্যি?
মধুমিতা: (হাসি) একদম। আমি পাহাড়ে শান্তি পাই, শহরে থাকলে আজকাল বড্ড ক্লস্টোফোবিক লাগে। সিকিম, দার্লিজিং-এ থাকলে আমার মনে হয় ঘরে ফিরছি। এখন তো কাজের চাপ বাড়ছে, তখন মনে হয় পাহাড়ে গিয়ে আমার কাজগুলো গুছিয়ে নিই। সকালে ঘুম থেকে আট-দশ কিলোমিটার মতো একটা ট্রেকিং হয়ে গেল, তারপর ঘরে এসে স্নান করে, লাঞ্চ করে আমি দুপুর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত একটু স্ক্রিপ্টগুলো পড়ে নিলাম। ওটা কিন্তু ঘুরতে যাওয়ার থেকে বেশি এমন একটা জায়গা যেখানে আমি কাজটা গুছিয়ে নিতে পারি। তারপর শ্যুটিংয়ের সময় আবার কলকাতা ফিরে আসি।
‘চিনি’কে দর্শক ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিল, এবার কি চিনি-র স্বাদ আরও মিষ্টি হবে?
মধুমিতা: এটা কিন্তু চিনি-র সিকুয়েল নয়। ফ্রেশ গল্প পুরোপুরিভাবে। আমি তো প্রচণ্ড এক্সাইটেড চিনি ২ নিয়ে, একটু চিন্তাতেও রয়েছি। তবে যা হওয়ার তা তো হয়ে গিয়েছে, এখন ছবি দর্শকদের দরবারে। ছবিটার মধ্যে একটা মিষ্টি ব্যাপার রয়েছে, সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাও রয়েছে। আমার মনে হয় দর্শক এই ছবিটা দেখলে কানেক্ট করতে পারবে। ডাবিং করবার সময় আমার সেটা মনে হয়েছে।
‘চিনি’তে মা-মেয়ে হিসাবে দর্শক দেখেছিল মধুমিতা আর অপরাজিতাকে, এবার মালকিন আর ভাড়াটিয়া। দু-জনের ইকুয়েশনটা কী বলবে?
মধুমিতা: অপাদি-র সঙ্গে চিনি-র পর আমার সেভাবে দেখা হয়নি। কিন্তু দেখা হলেই আমাদের মধ্যে অদ্ভূত একটা কানেকশন তৈরি হয়ে যায়। আর শ্যুটিং ফ্লোরে তো আমার চরিত্রে ঢুকে যায়। আমি অপাদি-কে দেখে রি-অ্যাক্ট করি, উনি আমাকে দেখে রি-অ্যাক্ট করেন। আমাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলতে থাকে, ব্যাপারটা খুব স্বতঃস্পূর্ত।
আরও পড়ুন-Exclusive Raj Chakraborty: রকি অউর রানি বাংলায় হলে চলত না, আমরা হিপোক্রিট: রাজ
‘চিনি ২’ মূলত অসম বয়সী বন্ধুত্বের গল্প। মধুমিতার অসম বয়সী বন্ধু রয়েছে?
মধুমিতা: আমার সব বন্ধুরাই তো অসম বয়সী! আমার মা আর দাদা আমার খুব ভালো বন্ধু। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বয়সটা আমার কাছে ম্যাটার করে না। জরুরি হল মনের কানেকশন। তাহলেই অনেক কিছু নিয়ে কথা বলা যায়। বন্ধু তো তারাই যাদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা যায় কোনও কারণ ছাড়াই। সেখানে জোর করে কিছু করার দরকার পরে না। আট-দশ বছরের বাচ্চারাও আমার বন্ধু। বন্ধুত্বে কানেকশনটাই মেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে মধুমিতার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে?
মধুমিতা: (প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই) সোহম… সোহম মজুমদার।
মধুমিতার জীবনের ‘3 AM ফ্রেন্ড’ কে?
মধুমিতা: আমি নিজেই নিজের বন্ধু। নিজেকে সঙ্গ দিতে শিখে গিয়েছে। রাতে দরকার পরলে আমি শিব ঠাকুরের সঙ্গে একটু গল্প-টল্প করে নিই। আমার একটু কনসাল্ট করেনি, আমি আসলে একটু আধ্যাত্মিক মানুষ হয়ে গিয়েছি। তাছাড়া আমার ছেলেবেলার বন্ধু শ্রেয়সী ভট্টাচার্য, ক্লাস ফাইভ থেকে ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ও ওকে যখন-তখন ফোন করতে পারি।
প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু লক্ষ্য থাকে। নিজের 'কেরিয়ার গোলস' কতটা পূরণ হল বলে মনে হয়?
মধুমিতা: আমি নিজেকে আজও নিউ কামার মনে করি। তার কারণ আমি নিজেও জানি না আমি কোথায় পৌঁছাতে চাই। জীবন একটা জার্নি, চলতে থাকতে হবে। আমি কোনও লাইফের কোনও স্টেশনে কমফর্টেবল হতে চাই না। আমি এখন বাংলায় কাজ করছি, যদি বাইরে থেকে কোনও অফার আসে তাহলে তার জন্য নতুন কিছু শিখতে আমি সবসময় তৈরি। যতদিন না রেস্ট ইন পিস হচ্ছে, ততদিন দৌড়ে যাব।
দক্ষিণে কাজ করেছো। আজকাল তো টলিপাড়া বলিউডমুখী, তোমার কি পরবর্তী লক্ষ্য মায়ানগরী?
মধুমিতা: এই ছবির (কে প্রথম কাছে ডেকেছি) পাশাপাশি একটা হিন্দি ছবির কাজ চলছে। সেটার শ্যুটিং খুব শীঘ্রই শুরু হবে। তা ছাড়াও জাতীয় স্তরে আরও একটা প্রোজেক্ট হওয়ার কথাবার্তা চলছে, খুব শিগগির জানাব। ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছি, কাজের মধ্যে রয়েছি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মধুমিতাকে বহুবার নীতি-পুলিশদের কটাক্ষ সইতে হয়েছে। ট্রোলিং বিষয়টার মোকাবিলা কীভাবে কর?
মধুমিতা: ট্রোলিং আমাকে অনেক বেশি স্ট্রং করেছে, আমি তাই ট্রোলড হওয়া নিয়ে এখন আর ভাবিও না। একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা…. একটা মানুষের ১০টা রিলেশনশিপ ভাঙতে পারে, অথচ একটা বিয়ে ভাঙলেই মেয়েটা চরিত্রহীন। তখন তাঁকে নিয়ে অনেকরকম প্রশ্ন ওঠে। এটা তো অনেক বছর ধরে আমার সঙ্গে ঘটছে। আমি শাড়ি পরে ছবি তুললে লোক দেখানো, আর সাহসী পোশাকে ছবি তুললে হয়ে যাব নিলর্জ্জ। বাবা-ছেলে-গাধার গল্পটা এইক্ষেত্রে আমি স্মরণ করে নিই। আসলে লোকের কথা শুনে নিজের লাইফস্টাইল বদলাতে হলে তাহলে তো বাঁচাই যাবে না। আমি সত্যি কেয়ার করি না। আমার পরিচিত সার্কেলে লোকজন আমাকে সম্মান দিলেই চলবে।
ডিভোর্স নিয়ে সমাজের মানসিকতা আজও বদলায়নি বলছো?
মধুমিতা: বিয়েটা ভেঙেছে মানে মেয়েটারই দোষ। আরে দোষী যে কাউকে হতে হবে তার তো কোনও মানে নেই। আর বিয়ে ভাঙার পর যদি মেয়েটা আরও বেশি স্ট্রং আর ইন্ডিপেনডেন্ট হয়ে যায়, তাহলে তো কথাই নেই! লোকে ভাবে নিশ্চয় ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। এইসব ভেবে বাঁচলে তো আমি ডিপ্রেশনে চলে যাব আর আমি ডিপ্রেশনে গেলে কেউ আমার বাড়িতে এসে ভাত দিয়ে যাবে না। আমাকেই খেটে খেতে হবে।
বিয়ে ভাঙার পর মধুমিতা কি আজও প্রেমে বিশ্বাস করে?
প্রেমে বিশ্বাস আছে কিনা জানি না। বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, কারণ আমি ওই বিষয়টা নিয়ে ভাবছিই না। আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে ভাবার সময় নেই। ভবিষ্যতে জীবন যদি আমার জন্য কিছু ভেবে থাকে তাহলে নিশ্চয় হবে (সম্পর্ক)। আর না হলেও ক্ষতি নেই, আমার কাছে সম্পর্কটা আবশ্যক বিষয় নয় জীবনের।
তাহলে মধুমিতা সিঙ্গল?
আমি এখন পুরোপুরিভাবে সিঙ্গল। গত চার বছর ধরে আমার আগে-পিছে তো কিছু নেই। যদি আমি প্রেমে পড়তাম তাহলে আমি খুব খুশি হয়ে সেটা ফ্লন্ট করতাম। লোকজন অনেক সময়ই প্রেমের কথা লুকিয়ে রাখে, আমি সেটায় বিশ্বাসী নই। যদি সত্যি আমার কাউকে পছন্দ হয় এবং আমি কারুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়াই তাহলে অবশ্যই সেটা আমি নিজের ফ্যান এবং শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে শেয়ার করে নেব।