কৌশানি মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী
আগামী ১৭ মে আমার জন্মদিন। আর ওই দিনের ঠিক আগেই আসে ১৪ মে, 'মাদার্স ডে'। যেকোনও মা ও সন্তানদের কাছেই হয়ত এই দিনটা স্পেশাল। আমার কাছেও 'মাদার্স ডে' (মাতৃ দিবস) তেমনই একটা সেলিব্রেশনের দিন ছিল। তবে এখন এটা আমার জীবনে একটা দুঃখ, মন খারাপের দিনে পরিণত হয়েছে। ‘মাদার্স ডে’তে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্ট দেখে তাই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। পুরনো স্মৃতিকে মনে করা ছাড়া আমার কাছে আর কোনও বিকল্প নেই।
মা-যে আমার কাছে কী ছিলেন, সেটা আর কীভাবে কাকে বোঝাব! আমার কাছে সবকিছুই মা ছিল, যেটাই ঘটত, মাকে এসে বলতাম। যেকোনও ছোটবড় ঘটনা, ভালো-খারাপ সবকিছুই মাকে এসে বলতাম। মায়ের থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শও নিয়েছি। আমার কাছে তাই আজকের দিনে মা-কে মিস করা ছাড়া কিছুই নেই।
আরও পড়ুন-মা হওয়ার দেড় বছরের মধ্যে মাকে হারালাম! জানি না, ওঁর মতো ভালো মা হতে পারব কি না: সোনালি
আরও পড়ুন-'তুমি মায়ের মতোই ভালো', এটা বলার মতো আমার জীবনে আর কেউ নেই: দিতিপ্রিয়া
মা যখন ছিলেন, মাদার্স ডে-তে সকালে মাকে ফুল উপহার দিতাম, কিছু একটা উপহার দিতাম। কেক কাটাতাম মাকে দিয়ে, সন্ধেবেলা হয়ত ডিনারে নিয়ে যেতাম। এগুলো আমি করতাম এই মা-মেয়ের দিনটা স্পেশাল করে রাখার জন্য, সঙ্গে মাসীকেও নিয়ে যেতাম। পরে বনি আমার জীবনে যখন এল, তখন ও এবং ওঁর মাও আমাদের সঙ্গে যেতেন। আবার কোনওবার হয়ত বনি আমি মিলে মায়েদের জন্য উপহার কিনাতাম। যাতে এই দিনটা মায়েদের জন্য স্পেশাল করে তোলা যায়। সারাবছরই মায়েরা থাকেন, তবে কিছুকিছুদিনে এই ভালোবাসার মানুষগুলোকে কিছু ভালো অনুভূতি দেওয়াটাই উপলক্ষ্য।
প্রত্যেকবার পুজো এলে মা আর আমি কেনাকাটা করতে বের হতাম, খাওয়াদাওয়া করতাম। আবার আমি একটু বেশি খেয়ে ফেললেন, মা সাবধান করতেন, বেশি খাস না, মোটা হয়ে যাবি! ওজন কমাতে হবে। কোনও ছেলে লাভ লেটার দিলেও মাকে এসে বলেছি, কী উত্তর দেব মাকেই জিগ্গেস করতাম। মা দেখতে চাইতেন, ছেলেটা কেমন! আমি যখন স্কুল ফেস্টে ডান্স করতাম, তখন মাও আমার সঙ্গে যেতেন। মা দেখতেন ছেলেদের গ্রুপকে দেখে আমায় বলতেন, এদের সঙ্গে পারফর্ম করা যায়, তবেই আমি রিহার্সাল করতাম। মাও যেতেন রিহার্সালে, বন্ধুদের সঙ্গেও মায়ের বেশ ভালোই জমত। আমার থেকেও বেশি বন্ধুরা মাকে ভালো বাসতেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীদের অনেকের কাছেও মা খুব প্রিয় ছিল। এখনও অনেকে বলেন, তোর মাকে খুব মিস করি। কালই একজন বললেন। ২০২১- আমার জীবন থেকে একটা বড় অংশ কেড়ে নিয়েছে। আমার মায়ের ভীষণ প্রণোচ্ছ্বল একজন মহিলা ছিলেন। তিনিও চাইতেন জীবনটাতে ভালোকরে বাঁচতে চাইতেন। আমি যে এমন এত বেশি কথা বলি, ফ্রেন্ডলি, এর সবকিছুর কারণ আমার মা। কোনও পার্টিতে আমি না নাচলে বকা খেতাম, মা বলতেন, 'তোরা কি বুড়ো হয়ে গেছিস নাকি? নাচ এক্ষুণি আমি দেখব’। বনির সঙ্গেও মায়ের সুন্দর সম্পর্ক ছিল। আমাদের ঝগড়া হলে মা বকাবকিও করেছেন অনেকসময়। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরও কিন্তু উনি জীবনে ভালোভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন। শেষবার যখনও কোভিডের সময় ওঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখনও উনি বিশ্বাস করছেন, যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু হয়নি…