এক সময় শরীরের কোনও একটা অংশ থেকে উঁকি মারত উল্কি। কিন্তু এখন সে দিন বদলেছে। অনেকেরই শরীরের একাধিক জায়গায় দেখা যায় ট্যাটু। ভোল বদলেছে ট্যাটুর। সমস্ত প্রজন্মই এখনই ট্যাটুর প্রতি ঝোঁকে।
ট্যাটু একটি অতি প্রাচীন বডি আর্ট। শিল্পের একটি রূপ যা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। কানের কাছে ডানা মেলা ছোট্ট একটি পাখি। অথবা কবজির অংশে ফুটে ওঠা পাপড়ি মেলা একটি লাল ফুল। কখনও প্রিয় গায়কের গানের দুই লাইন। শরীরের ক্যানভাসে খোদাই করা পছন্দের পংক্তি, ছবি কিংবা উদ্ধৃতি কেবল ফ্যাশন স্টেটমেন্টই নয়, এটি প্রকাশ করে একজনের ব্যক্তিত্বকেও। শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকার ইতিহাস বেশ পুরনো। আরও পড়ুন: ত্বক এমন হবে, দেখতে লাগবে ফিল্মস্টারদের মতো! মুখ ধোওয়ার আগে শুধু খেয়াল রাখুন এগুলি
হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরা ক্রীতদাস, অপরাধী এবং যুদ্ধবন্দীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ট্যাটু ব্যবহার করত। ধর্মীয় উল্কি আঁকার প্রচলন ছিল মূলত মিশর এবং সিরিয়ায়। এক সময় পদমর্যাদার প্রতীক হিসেবে কিংবা অত্যাচারী রাজার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতেও উল্কি আঁকার প্রচলন ছিল।
এরপর যুগে যুগে নানা কারণে শরীরকে ক্যানভাস বানিয়েছে মানুষ। কেউ প্রিয়জনের নাম লিখে ভালোবাসা প্রকাশ করতে শরীরে একে নেন উল্কি। কেউবা পছন্দের গায়কের গানের কথায় সাজান হাত কিংবা ঘাড়। প্রযুক্তি এবং গ্রহণযোগ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে ট্যাটু করানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে। ট্যাটু করার আগে আপনার বেশ কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখা উচিত।
ট্যাটু করানোর আগে জেনে নিন এই বিষয়গুলি-
১. ট্যাটু করাতে ব্যথা লাগে। তাই এর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকুন।
২. ডিজাইন বাছাই করার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখুন। কারণ এটি স্থায়ী।
৩. কোথায় ট্যাটু করাবেন তা আগে থেকেই ঠিক করুন। ট্যাটু করার ফলে শরীরের কিছু জায়গায় বেশি ব্যথা হতে পারে।
৪. আপনি কেন ট্যাটু করাচ্ছেন, এই বিষয়টি আপনার মনে পরিষ্কার হওয়া উচিত।
৫. আপনার সংবেদনশীল ত্বক থাকলে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৬. ট্যাটু করার আগে শিল্পীর পোর্টফোলিও পরীক্ষা করুন।
৭. ট্যাটু করার জন্য সর্বদা একটি নতুন সুই ব্যবহার করুন। এছাড়াও ট্যাটু সরঞ্জাম এবং দোকান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখুন।
৮. ট্যাটু করানোর পরে, এটিও যত্ন নিতে হবে। ট্যাটু করিয়ে নেওয়ার পরে, অবশ্যই এটি সম্পর্কেও জানুন। একজন শিল্পী যত ভালো করেই ট্যাটু করে দিক না কেন, যার শরীরে ট্যাটু করা হয়েছে তার যত্নের উপরই নির্ভর করছে শেষ পর্যন্ত তা শরীরে কতো সুন্দরভাবে ফুটে উঠছে।
৯. ট্যাটু করার পর পাতলা প্লাস্টিকের সাহায্যে ঢেকে দেওয়া হয় অংশটি। বাড়ি ফিরে সেটা খুলে পরিষ্কার করতে হয়। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জল লাগানো যাবে না। এরপর সামান্য পানি লাগানো যাবে। তবে ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত যত কম জল লাগানো যায় ততই ভালো।
১০. ট্যাটু করার পর অয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয় ১০ থেকে ১৫ দিন ব্যবহারের জন্য। এছাড়াও আরেকটি ব্যবস্থা রয়েছে। সেটাতে প্রোটেক্টিভ লেয়ার স্টিকারের মতো লাগিয়ে দেওয়া হয় ট্যাটুর উপরে। পানিরোধী এই স্টিকার ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। তবে এটার জন্য গুণতে হয় বাড়তি টাকা।
১১. ট্যাটু করার পর পরই সরাসরি সূর্যের আলো, সুইমিং পুল, সমুদ্রের পানি, অ্যালার্জি হয় এমন খাবার, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।
ট্যাটু করার সময় ব্যথা লাগে?
অনেকের মনেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। ব্যথার ভয়ে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকে করেন না ট্যাটু। ট্যাটু করার ক্ষেত্রে কাজ করা হয় ডার্মেস এরিয়াতে। এটি ত্বকের দ্বিতীয় স্তর। এখানে খুব বেশি ব্যথা লাগে না কিংবা রক্তপাত হয় না। তবে ট্যাটু শরীরের কোন অংশে করাচ্ছেন সেটার উপরেও নির্ভর করে ব্যথা কতটুকু লাগছে। শরীরের কিছু অংশের ত্বক সংবেদনশীল বেশি। সেখানে উল্কি আঁকতে কিছুটা ব্যথা লাগতে পারে। আবার সহ্যক্ষমতার উপরেও এটি অনেকাংশেই নির্ভরশীল। তবে সূক্ষ্ম ব্যথাবোধ কিছুক্ষণের মধ্যেই সয়ে যায় সাধারণত।