প্রয়াত বলি-অভিনেতা ওম পুরি এবং কিংবদন্তি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ যে পরস্পরের 'বেস্ট ফ্রেন্ড' ছিলেন একথা ইন্ডাস্ট্রির সর্বজনবিদিত। বিভিন্ন ছবিতে একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার পাশাপাশি পর্দার বাইরেও তাঁদের বন্ধুত্ব প্রায় জায়গা করে নিয়েছিল প্রাচীন অরণ্য প্রবাদে।তবে জানেন কি এই ওম পুরিই একবার তাঁর প্রিয় বন্ধু নাসিরকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন? নিজের আত্মজীবনী 'অ্যান্ড দেন ওয়ান ডে: আ মেমোয়ার' -এ সেই ঘটনার কথা নিজেই জানিয়েছেন নাসিরুদ্দিন স্বয়ং। দু'জনের পরিচয় ও সেখান থেকে জমাটি বন্ধুত্ব শুরু যখন তাঁরা পুণের বিখ্যাত 'এফটিআইআই' এর ছাত্র।
সেটা ১৯৭৭ সাল। মুম্বইয়ের এক রেঁস্তরায় বসে রয়েছেন নাসির এবং ওম। খাওয়াদাওয়া,গল্প,আড্ডা চলছে। এমন সময় যশপাল নামে নাসিরের এক প্রাক্তন বন্ধু হাজির হল সেখানে। এই দেখা হওয়ার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই যশপালের সঙ্গে পুরোপুরি বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন নাসির। বন্ধ করেছিলেন কথাবার্তাও। তাই ওমের সঙ্গে কথা বললেও নাসিরের সঙ্গে একটি শব্দও খরচ করেননি ওই ব্যক্তি। 'জানে ভি দো ইয়ারো' অভিনেতার কথায়,' আমি আর যশপাল পরস্পরের সঙ্গে কথা না বললেও আড়চোখে যে ও আমাকে মাপছিল তা বুঝতে পেরেছিলাম। এরপর ঠিক আমার পিছনের টেবিলে গিয়ে বসল ও। কিছুক্ষণ পর গল্প আড্ডায় মজে ওঁর অস্তিত্ব যখন প্রায় ভুলে গেছি, যেন সময় পিঠে কী যেন অসম্ভব ধারালো কিছু ভেদ করে ঢুকে গেল। অসম্ভব যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে গেলাম। দেখলাম চিৎকার করে চেয়ার ছেড়ে আমার দিকে ছুটে আসছে ওম আর পাশে যশপাল দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতে ধরা রক্তমাখা এক ধারালো ছুরি। ফের আমাকে আঘাত করতে উদ্যত হলে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে যশপালকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করল ওম!'
ঘটনার শেষ এখানেই নয়। এরপর হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে প্রায় হাতাহাতি লেগে যেত ওম পুরির। কারণ অ্যাম্বুলেন্স ডাকার আগে ম্যানেজার চাইছিলেন পুলিশ আসুক। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পর কোনওরকমে তাঁদের হাতে পায়ে ধরে আহত নাসিরের সঙ্গে থাকার অনুমতি জোগাড় করে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন ওম। পুলিশ যখন আহত নাসিরকে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যস্ত ততক্ষণে ওদিকে হোটেলের রান্নাঘরে উত্তম মধ্যম 'শিক্ষা' দেওয়া হচ্ছে যশপালকে। অবশেষে কোনওরকমে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে জুহুর কুপার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নাসিরুদ্দিনকে। সারাটা সময় বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছিলেন ওম।