বাংলায় রক মিউজিকের অন্যতম পথিকৃত রূপম ইসলাম। তবে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিতর্ক ঘিরে আছে রূপমকে। যার পিছনে আছে শো শেষ করে ‘ক্লান্ত’ রূপমের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা একটি কথা। যা হয়তো লেখার অযোগ্য। তবে গায়কের ভক্তদের দাবি, শো শেষে পরিশ্রান্ত মানুষটাকে বিরক্ত করাতেই এরকম একটা ‘অপভাষা’র ব্যবহার হয়েছিল। রূপম পরের একটি লাইভ শো থেকে নিজেও জানিয়েছেন, তিনি তাঁর অনুরাগীদের ইচ্ছেমতো ছবি দিতে রাজি। কিন্তু শো শেষে ৩০টা মিনিট তাঁকে দিতে। যাতে তিনি অন্তত হাঁপিয়ে ওঠার পর শ্বাস ফিরে পান। অর্থাৎ একটানা পারফর্ম করার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেন।
কদিন আগেই ছিল রূপমের জন্মদিন। স্বভাবতই গায়ককে ঘিরে ধরেছিল তাঁর অনুরাগীরা। একাধিক কেক নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল সকলে নিজেদের প্রিয় মানুষটাকে। আর ভালোবাসার মানুষগুলোকে সামনে পেয়ে, মন খুলে কথা বললেন রূপম। তাঁর মুখ থেকে বের হওয়া গালাগালি নিয়ে, কথা বললেন খোলাখুলি।
রূপমকে বলতে শোনা গেল, ‘আমি দেওয়ার পর থেকে ওটাই বিখ্যাত হয়ে গেছে। বাংলায় কিন্তু আরও কুৎসিত কুৎসিত গালাগালি আছে। আমি কিন্তু সেইসব দেই না। আমি এটাই দেই কারণ এটা আমার বাবা দিতেন। এটা পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছি। এবার আমি যদি খারাপ হই, আমার বাবা খারাপ। আমার বাবা যদি খারাপ হন, তাহলে আমি যেখান থেকে আসছি সেটা খারাপ। তাহলে পুরোটাই খারাপ।’
গায়ক সাফ জানান, খারাপ-ভালো তিনি যাই বলেন, সেটা তাঁর নিজের মন থেকে আসা। কখনো কেউ স্ক্রিপ্ট লিখে দেয়নি। তাঁর প্রতিটা শো-এর অভিনবত্ব তাঁর মুখের কথাই। রূপম যোগ করেন, ‘কিন্তু আবার দেখো, খারাপ থেকেই তো রক মিউজিক তৈরি হয়। সারা বিশ্বে কোন ভগবান রক মিউজিক তৈরি করেছে। আমরা যদি আমাদের সমাজকে মেনে নিতে না পারি, আমাদের সমাজেরই একটা অংশকে বর্জন করতে চাইছি, এটা তো হয় না। আমাকে কেউ কোনওদিন স্ক্রিপ্ট লিখে দেয়নি। আমার বলাটা যতটা লোকের কাজে লাগে, আর কার বলাটা এত কাজে লাগে, সিনেমার হিরোদের ছাড়া। সিনেমার হিরোদের কিন্তু স্ক্রিপ্ট লিখে দেয়। আমি তো স্টেজে কী বলব আগে ঠিক করে যাই না। ইনস্ট্যান্টলি বলি, আর প্রতিটা শো-তে আলাদা কথা বলি। কে আছে? বিশ্বে কোন গায়ক আছে, যে প্রতিদিন এক গান গাইলেও, প্রতিটা কথা আলাদা বলে। এটাই আমি।’
এরপর রূপমের কথায় এল রামকৃষ্ণের প্রসঙ্গও। বললেন, ‘রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব যেমন অনেক ভালো কথা বলেছেন। তেমন খিস্তিই দিয়েছেন। তুমি ওটা বাদ দিয়ে ওঁকে পাবে না। তুমি যদি মনটা খুলতে না পারো। তাহলে মন খোলা কথা কোনওটাই আসবে না। খারাপটাও আসবে না ভালোটাও আসবে না। এই যে তোমরা এসেছ, আমি তো চুপ করে থাকিনি। তোমরা কী বলেছ আমাকে, কথা বলতেই হবে! কিন্তু আমি তো বলছি। এইটাই আমি। আমি কথা বলব। আমাদের সমাজে যে সব কথা আছে, তার মধ্যে খুব খারাপ বলব না। তবে মাঝারি খারাপ বলব। কারণ সেটা আমি গানেও লিখি। আমার অনুষ্ঠানেও বলি। মঞ্চ থেকে ওই গালাগালি আমি বহুবার করেছি।’
সবশেষে নিজের হয়েই বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের মানুষ-সত্তাকে ভালো না বাসি, সবসময় দেবত্ব চাই! আমি দেবত্বে বিশ্বাস করি না। আমি বলি, ভালো হও, খারাপ হও., শয়তান নয়, মানুষ হও। কেউ যদি তোমাকে আঘাত করে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। সততার বিলাসিতা আর নয়। অনেক সময় পরিস্থিতি আসে, উপযুক্ত জবাব দিতে হয়। সেটা সেই ভাষাতেই দেওয়া উচিত।’