সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার খবর সামনে আসবার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে কাদা ছোড়াছুঁড়ি। পর্দার ধোনির মৃত্যুর জন্য বলিউডের বেশ কিছু নামী প্রযোজনা সংস্থা ও তারকাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন নেটিজেনরা। সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে যে কাঁটাছেড়া সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তা নিয়ে ক্ষুদ্ধ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সুশান্তের সঙ্গে এই টলি নায়িকার পরিচিতি দীর্ঘদিনের। একসঙ্গে ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী ছবিতে কাজ করেছিলেন তাঁরা, ফের একবার পর্দায় একসঙ্গে দেখা যাবে তাঁদের-দিল বেচারা ছবিতে। যদিও দুর্ভাগ্যবশত এটাই হবে সুশান্ত সিং রাজপুতের শেষ ছবি।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে স্বস্তিকা জানান, এটা চোখ খুলে দেওয়ার মতো এক ঘটনা এবং এরপর থেকে তিনি মরতেও ভয় পাবেন! পাতাল লোক তারকা বলেন, 'আমরা এমন এক দেশে বাস করি,যেখানে আমরা মরা মানুষকেও শান্তি দিই না। শুধু এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য নয়,সাধারণ মানুষের জন্য-যাঁরা সংবেদনশীল তাঁদের সবার জন্য এটা একটা চোখ খুলে দেওয়ার মতো ঘটনা, একটা দৃষ্টান্ত। কেউ মারা গেলে- পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমরা সেই মৃত মানুষটির আত্মার শান্তি কামনা করব না? আমাদের কারুর মাথাব্যাথা নেই তাঁর বাড়ির লোকজন বেঁচে রয়েছে সেই দিকে। আমরা পরোয়া করব না, মানুষের কাঁদবার জন্য একটা সময় লাগে। সবার তখনই প্রতিক্রিয়া চাই,তখনই লিখতে হবে। সবাই তদন্তকারী হয়ে যাবে,সবাই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ!.. যেন সবাই ‘সুইসাইডাল’-সুইসাইড একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে! আমাকে এখন বুঝতে হবে আমি বেঁচে থাকলেও যারা সম্মান দেবে না, আমি মরে গেলে তো তারা একেবারেই সম্মান দেবে না। তাহলে নিজেকে আটকে রাখব কেন? মানুষ কী বলবে সেটা ভেবে? বেঁচে থাকতেই যা করবার করে যাই। মানুষ তো মরতেও ভয় পাবে। আমি তো পুরোপুরি ভয়ে অসাড় হয়ে গেছি। আমি তো এখন ১০০ বছর বয়সে মরতে চাই। যাতে মানুষ আমাকে ভুলে যায়।যাতে কেউ কিছু লিখতেই না পরে। এটা আমার নতুন প্ল্যান-এটা আমার নিউ নর্ম্যাল।
গ্ল্যামার দুনিয়ায় নেপোটিজমের উপস্থিতি নিয়ে স্বস্তিকার কী মত? অভিনেত্রীর সাফ জবাব, ‘স্বজনপোষণ সর্বত্র আছে-কর্পোরেট দুনিয়ায় আছে। সেখানেও একজন মহিলা প্রমোশন পেলে তাকেও কথা শুনতে যেটা একজন নায়িকাকে শুনতে হয়। আচ্ছা বলুন তো একজন ব্যবসায়ী নিজের ব্যবসাটা তাঁর ছেলেমেয়ের হাতে তুলে দেন না! একজন চিকিত্সক চান না তাঁর ছেলে বা মেয়েও চিকিত্সক হবে! এটা সর্বত্র রয়েছে। মানুষ শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকেই ফোকাসে রাখবে। সব খারাপ,সব নেগেটিভ জিনিস যা মানুষের জীবন খারাপ করে দিচ্ছে সেটা কি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে? সমাজের এই ধারণাটা বদলানো দরকার। বাকি দুনিয়াটা কি 'গোলাপ দিয়ে সাজানো?' প্রশ্ন স্বস্তিকার।
নেপোটিজম নিয়ে দিন কয়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়াতেও একটি বিস্ফোরক পোস্ট লিখেছিলেন স্বস্তিকা। স্বস্তিকা বলেন, 'স্লাটশেমিং শুধু আমাদের মত 'কুযোগ্য' অভিনেত্রীদের করা হবে যারা একেবারেই অভিনয়টা পারেনা' নাকি এক পরিচালকের সঙ্গে ১১টা ছবিতে কাজ করা সৌমিক হালদার,৯টা ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব সামলানো অনুপম রায়, ৯টি ছবিতে অভিনয় করা প্রসেনজিত্, ৭টি ছবিতে অভিনয় করা যিশু সেনগুপ্ত এবং ৬টি করে ছবিতে অভিনয় করা অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সকলেই কী ‘সবাই উভকামী ও সুযোগসন্ধানী’?
নেপোটিজম শুধু গ্ল্যামার দুনিয়াতে আছে কিংবা সেটা শুধু প্রেম সম্পর্কের মধ্যেই আবদ্ধ এই তত্ত্ব একেবারেই মানতে না-রাজ স্বস্তিকা। প্রসঙ্গত পাতাল লোকের সৌজন্যে আপতত জাতীয় স্তরেও প্রচুর আলোচিত এবং প্রসংশিত হয়েছেন স্বস্তিকা। অন্যদিকে সদ্যই আমাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে স্বস্তিকার প্রথম মরাঠি ওয়েব সিরিজ ‘আরোন’।