নায়ক সুলভ রূপ বা চেহারা কোনওটাই তার ছিল না। ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে ‘মিসফিট' মনে হত অভিনেতা বিপিন শর্মা। অভিনয় কেরিয়ারে ইতি টেনে কানাডায় গিয়ে নতুন জীবন গড়ছিলেন, কিন্তু বন্ধু ইরফান খানের ছবি ‘মকবুল’ তাঁর ভাবনা বদলে দেয়। সব পরিকল্পনা বাতিল করে ফের ভারতে তথা অভিনয়ের দুনিয়ায় ফিরে আসেন বিপিন। যাঁকে ‘তারে জমিন পর’ ছবিতে ঈশান অবস্তি (দর্শিল সাফারি)-র বাবার চরিত্রে দেখেছে দর্শক।
বিপিন শর্মার কথায়, ‘তোমার ভিতরের আত্মবিশ্বাসটাই জরুরি। নিজেকে উপলব্ধি করতে হবে আমি এটাই করতে চাই, এবং আমি এটা করতে জানি। সেই স্তরে না পৌঁছাতে পারলে তুমি নিজেকে খুঁজে পাবে না।’ কানাডায় ফিল্ম এডিটর হিসাবে কাজ করছিলেন বিপিন। যখন ভারতে আসতেন ইরফান খান এবং নাসিরুদ্দিন শাহ-র সঙ্গে দেখা করতেন। ইরফানের জোরাজুরিতেই ‘মকবুল’ দেখেন। বিশাল ভারদ্বাজের ওই ছবি দেখে ন্যাশন্যাল স্কুল অফ ড্রামার এই ছাত্রের মনে হয়েছিল- ‘সিনেমা বদলাচ্ছে, আশু পরিবর্তন হচ্ছে অভিনয় জগতে’।
২০০৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল আমির খান-অমল গুপ্তে পরিচালিত ছবি ‘তারে জমিন পর’। এই ছবির সুবাদে গোটা দেশে পরিচিতি পান বিপিন, নন্দকিশোর অবস্তির চরিত্রে দাগ কেটেছিলেন তিনি। কিন্তু এই ছবির সাফল্যের কারণেই ‘স্টিরিওটাইপ’ চরিত্র পেতে শুরু করেন তিনি। তাঁর নামের পাশে জুড়ে যায় ‘চরিত্রাভিনেতা’ তকমা। টাকার উপার্জনের জন্য ছবি করতে হলেও ভালো চরিত্রের খিদে কোনওদিন ফেলতে পারেননি বিপিন।
ঈশানের বাবার ‘ভিলেন’ বাবা হিসাবে দর্শক তাঁকে গ্রহণ করেছিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অভিনেতা জানান, ‘তারে জামিন পর-এর পর আমাকে মুশকিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছে। লোকজনকে এটা বিশ্বাস করাতে যে আমি শুধু একজন রাগী বাবা নই, আমি আরও অনেক কিছু করতে পারি। আমি সত্যি কৃতজ্ঞ যে সুধীর মিশ্রা, তিগমাংশু ধুলিয়ার মতো পরিচালকরা আমাকে মজাদার গ্যাংস্টারের চরিত্র দিয়েছে। আর অনুরাগ কশ্যপ তো আমাকে গ্যাংস অফ ওয়াসিপুরের অংশ করার পাশাপাশি মিম-এর অংশও বানিয়ে ছেড়েছে’।
বিপিনের কথায় ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনকে বোঝাতে বেগ পেতে হয়েছে, তিনি একজন অভিনেতা শুধু চরিত্রাভিনেতা নন। সব ধরণের চরিত্রই সাবলীলভাবে পর্দায় উপস্থাপিত করতে পারবেন তিনি, এই ভরসাটা তৈরি করতে সময় লেগেছে। তবে নিজের কেরিয়ারগ্রাফে সন্তুষ্ট বিপিন শর্মা।
তারে জমিন পর ছবি নিয়ে একটা আক্ষেপ রয়েছে বিপিনের। তিনি বলেন, ‘অনেক শেখবার সুযোগ পেয়েছি। বিশেষত আমির খানের থেকে। তবে এই ছবির পর লোকে আমাকে শুধু বাবার চরিত্রই অফার করত, ভাবত আমি ওটাই করতে পারি। তবে আমার আশা ছিল আমি অনেক চ্যালেঞ্জিং ছবির অফার পাব। সেটা হয়নি। ভাগ্যিস টাকার ফাঁদে পা দিয়ে একইরকম চরিত্রগুলো গ্রহণ করিনি।’