চলতি মাসেই আমাজন প্রাইম ভিডিয়োয় মুক্তি পেয়েছে বরুণ-জাহ্নবী অভিনীত ‘বাওয়াল’। উত্তর প্রদেশের প্রেক্ষাপটে সাজানো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গল্পের সঙ্গে এই ছবিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে জুড়ে দিয়েছেন পরিচালক নীতিশ তিওয়ারি। ছবি মুক্তির পর থেকেই বিতর্কের শেষ নেই। নেটপাড়ার একটা বড় অংশের দাবি, ছবিতে হলোকাস্ট এবং অসউইজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের যে তুলনা টানা হয়েছে তা ‘অসংবেদনশীল’। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে হিটলারের অমানবিকতার চূড়ান্ত নির্দশনকে এমন খাটো করে দেখানোর। অসউইজের বীভৎসতাকে কম গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরার জন্য আগেই ছবিটি ওটিটি থেকে সরানোর দাবি তুলেছে সাইমন ওয়েসেনথাল সেন্টার নামে একটি ইহুদি মানবাধিকার সংস্থা। এবার এই বিতর্কে মুখ খুললেন ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত।
টুইট বার্তায় ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত লেখেন- ‘আমি বাওয়াল দেখিনি এবং দেখব না তবে আমি যা পড়ছি তাতে যে ভাষার প্রয়োগ করা হয়েছে, যেভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে গোটা বিষয়কে তা দুর্ভাগ্য়জনক। হলোকাস্টের বীভৎসতাকে কম গুরুত্ব দিয়ে দেখানোটা সকলকেই বিচলিত করেছে। আমি আবেদন জানাবো যাঁরা হলোকাস্টের বীভৎস রূপ সম্পর্কে অবগত নন, দয়া করে নিজেদের শিক্ষিত করে তুলুন’।
‘বাওয়াল’ এর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের গ্যাস চেম্বারে ঘটা গণহত্যার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের তুলনা করে ছবির এক দৃশ্যে জাহ্নবীকে বলতে শোনা যায়- ‘সব সম্পর্কই এক সময় অসউইজের মতো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়’।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বীভৎসতার এক নাম অউসইজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের। পোল্যান্ডে গড়ে তোলা এই ক্যাম্পে লাখ লাখ ইহুদিকে হয় গ্যাস চেম্বারে আটকে, নয়তো জীবন্ত পুড়িয়ে বা গুলি করে হত্যা করে হিটলারের বাহিনী। এখানেই শেষ নয়,এরপর লাশগুলো থেকে চুল, দাঁত, কাপড় আলাদা করে পোড়ানো হত সেই ক্য়াম্পের ভিতরে। তাদের উপর চলত নানারকম পরীক্ষা-নীরিক্ষা। জানা যায়, প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে গণহত্যা করা হয়েছিল এই ক্যাম্পে। সেই ঘটনাকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের চড়াই-উতরাইয়ের সঙ্গে কীভাবে গুলিয়ে ফেললেন পরিচালক? প্রশ্ন অনেকের।
মৃগীরোগে আক্রান্ত স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের প্রথম দিন থেকেই শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব লখনউয়ের স্কুল শিক্ষক অজ্জু (বরুণ)-র। নিজের ইমেজ বজায় রাখতে প্য়ারিস-সহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূলকেন্দ্রগুলিতে বউকে নিয়ে হাজির অজ্জু। সেখান থেকেই গল্পের মোড় ঘোরে। ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্র ধরে কীভাবে কাছাকাছি আসে তাঁরা, কেমনভাবে নিজেদের অন্তরের যুদ্ধে জয়ী হয়- তাই তুলেই ধরেছেন নীতিশ তিওয়ারি।
হলোকাস্ট বিতর্ক প্রসঙ্গে আগেই কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ছবির নায়ক বরুণ। তাঁর কথায়, ‘কিছু লোক এই বিষয়ে উত্তেজিত বা সংবেদনশীল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু আমার আশ্চর্য লাগে সেই সংবেদনশীলতা কোথায় যায় যখন তাঁরা কোনও ইংরেজি ছবিতে এই ধরনের দৃশ্য় দেখেন। তাদের সেখানে সবকিছু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের লাফানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের একটি নির্দিষ্ট উপায়ে জিনিসগুলি দেখানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তখন সবই ঠিক লাগে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটা দুর্দান্ত সিনেমার ছোট্ট দৃশ্য দেখেও মানুষ একইভাবে উত্তেজিত হয়েছে। এটি এমন একটা দৃশ্য যা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তখন মনে হয়নি ওরা আপনাদের নিয়ে আরও সংবেদনশীল হতে পারত? তখন আপনাদের সমালোচনা কোথায় যায়।’ প্রসঙ্গত, নোলানের ‘ওপেনহাইমার’-এ দেখানো সেক্স সিনে গীতা পাঠের দৃশ্য নিয়েই এই বয়ান বরুণের।