বর্তমান সময়ে বাংলা ধারাবাহিকের টিকে থাকার মেয়াদ ধীরে ধীরে কমছে। টিআরপি নিয়ে চ্যানেলের থেকে চাপ দেওয়া হয় প্রোডাকশন হাউজগুলোতে। আর প্রোডাকশন হাউজ সেই চাপ দিয়ে দেয় লেখক-পরিচালকদের। ফলে গল্প যে প্লট নিয়েই শুরু হোক না কেন, মাসখানেক যেতে না যেতেই সেই দেখা যায় নায়িকা শ্বশুরবাড়ির চাপে সংসারের জটিল কুটকাচালিতে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। বরের আরেকটা বিয়ে বা আরেকটা প্রেম নিয়ে সে ব্যতিব্যস্ত। ননদ বা দেওরের শয়তানি সকলের সামনে আনার তার চেষ্টা বারে বারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথবা অসহায় হয়ে স্বামীর পরকীয়াতে বাড়ির একধারে বসে চোখের জল ফেলছে।
তবে আজকাল যেন এইসব ফর্মুলাও পুরোপুরি কাজ করছে না। বাংলা সিরিয়ালের বাজার একটু হলেও মন্দা যাচ্ছে। চ্যানেলও কোনও রিস্ক না নিয়ে কখনও দু মাসে, কখনও চার মাসে বন্ধ করে দিচ্ছে বড় বড় স্টারকাস্ট নিয়ে শুরু হওয়া মেগা।
বর্তমানে তুঁতে সিরিয়ালটি আসছে জি বাংলার টপার ধারাবাহিক ‘জগদ্ধাত্রী’র বিপরীতে। বোঝাই যাচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে টানা যে ধারাবাহিক টিআরপিতে কখনও দ্বিতীয় কখনও তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে, তাকে এত সহজে টলানো মুশকিল। গত সপ্তাহেই যেমন জগদত্রীর টিআরপি যেখানে ছিল ৭.৯, সেথানে তুঁতের মাত্র ৪.৪। মানে স্লট হারা হচ্ছে তো বটেই, তাও লম্বা ব্যবধানে। তাই কড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল চ্যানেল ও প্রযোজনা সংস্থা।
৫ জুন থেকে সম্প্রচার শুরু হয় তুঁতের। কিন্তু পাঁচ সপ্তাহের উপর হয়ে গেলেও, টিআরপি তো বাড়েইনি, উল্টে যেন কমে যাচ্ছে। আক তাই ধারাবাহিকের টিআরপি বাড়াতে পরিচালক মনোজিৎ মজুমদারকে বাদ দেওয়া হল। এর আগেও এই কাজ করেছে অ্যাক্রোপলিস প্রোডাকশন হাউজ। সেই সময় সাহেবের চিঠি-র টিআরপি না ওঠায় পরিচালক বিধান পালকে বাদ দিয়ে আনা হয়েছিল মনোজিতকে। এবার বাদ পড়লেন মনোজিতই। তাঁর কাছে যখন তুঁতে-র অফার আসে তখন তিনি মন দিতে চাই ধারাবাহিকটির কাজ করছিলেন। সেটি ছেড়ে তুঁতে-তে যোগ দেন। আপাতত তুঁতে-র পরিচালনা করবেন সায়ন দাশগুপ্ত।
এক গ্রামের মেয়ে তুঁতের ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। চলে আসে কলকাতার লাহিড়ি ম্যানসনে। যারা ফ্যাশনের জগতের বিখ্যাত নাম। আপাতত সেই বাড়ির বড় ছেলে রঙ্গনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে তুঁতের। আর দেখানো হয়েছে সেই বাড়ির ‘খলনায়ক’ সদস্য অভিষেক হুইলচেয়ারে থাকলেও সে যে হাঁটতে পারে তা জেনে গেছে তুঁতে। মানে এবারই জমবে আসল খেলা। বড়় বড় টুইস্ট আনার সুযোগ পাবেন নতুন দায়িত্ব নেওয়া পরিচালক। বাডির ‘কাজেরলোক’ থেকে লাহিড়ি বাড়ির বউ ও বড় ফ্যাশন ডিজাইনার হয়ে ওঠার তুঁতের লড়াই-ই এখন বাঁচাতে পারবে এই ধারাবাহিককে। নয়তো হয়তো মাস তিন চার হতে না হতেই শুনতে হবে টাটা গুড বাই।