‘রামনবমীতেও আমার রাজ্যে ছুটি। মানছি না।’, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্য়াটফর্ম ফেসবুকে এমন মন্তব্য রেখে একটি চাঁচাছোলা পোস্ট করলেন কবীর সুমন। প্রসঙ্গত, এই প্রথম রামনবমীতে ছুটি ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। শনিবার এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নবান্ন। আগামী ১৭ এপ্রিল রামনবমী। ওই দিন জরুরি পরিষেবা বাদ দিয়ে রাজ্য সরকারি এবং সরকার পোষিত সমস্ত প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে।
লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকারের এই ঘোষণা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন অনেকে। গত কয়েক বছর ধরেই রামনবমীকে কেন্দ্রে করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় উত্তজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি মহা ধুমধাম করে রামনবমী পালন করে কলকাতা ও জেলায়-জেলায়। এদিকে রামনবমীকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্বের তাস খেলার চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। আদালতের নির্দেশে হনুমান জয়ন্তীতে বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। আরও পড়ুন: শোশা-র মঞ্চে সেরা ছবি ‘অ্যানিম্যাল’, বাঙালি অভিনেতাও পেলেন পুরস্কার, দেখুন তালিকা
রামনবমীতে ছুটি ঘোষণাকে কটাক্ষ করে এবার ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করলেন সুমন। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি নন ‘গানওয়ালা’। তৃণমূল সরকারের ঘোষিত সমর্থকের গলাতেই শোনা গেল ক্ষোভের সুর, দীর্ঘ পোস্টে রীতিমতো রামনবমীর ছুটির সমালোচনায় করে তিনি লিখেছেন, ‘আর পারলাম না। রামনবমীতেও আমার রাজ্যে ছুটি। মানছি না। রামনবমী = জাতীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন দিবস। ঐ দিন হবে আমার রাজ্যে ছুটির দিন। চমৎকার। অনেক দিন আগে আমাদের গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন বোম্বের শিল্পীদের আমরা এত টাকা, সম্মান দিয়ে বাংলায় আনি কেন? কেন তাদের দিয়ে গান গাওয়াই? বোম্বের লোকেরা কি ওদের গণেশ পুজোয় বাঙালি শিল্পীদের নিয়ে যায়? হিন্দি হিন্দুত্বওয়ালাদের তোয়াজ করতে রামনবমীর ছুটি? মানছি না আমি'।
আরও লেখেন, 'আমি বাধ্য হচ্ছি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতা করতে। এই সরকার বাংলা খেয়ালকে মান্যতা দিয়েছেন। তাঁদের কুর্ণিশ জানিয়েছি বারবার। কিন্তু এ রাজ্যের ভাষা বাংলা। সেই ভাষায় খেয়াল রচনা গাওয়া শেখানো হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কাজেই রাজ্য সরকার অস্বাভাবিক কিছু করেননি। তাঁদের করণীয় কাজের সীমা পেরিয়ে করেননি কিছু’।
প্রতিবাদ জানিয়ে সুমন লেখেন, ‘কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা সরকার যদি সত্যিই করে থাকেন তাহলে আমি সরকারের এই ঘোষণার এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি’।
নতুন এক সঙ্গীত একাডেমি তৈরির কথা বলে লিখেছেন, ‘বাংলায় খেয়াল রচনা ও গাওয়া শুরু করেছিলাম কোনও নেতা বা সরকারের মুখ চেয়ে নয়। বাংলা খেয়ালের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম একজন নাগরিক হিসেবে। অন্যায় আবদার করিনি। শারীরিক বিকলতা সত্ত্ব্বেও আমি বাংলা খেয়াল নিয়ে কাজ করে যাবো যতদিন পারব। চেষ্টা করব একটা একাডেমি তৈরি করে যেতে যা সরকার বা কোনও দল বা নেতার মুখাপেক্ষী থাকবে না। জয় বাংলা, জয় বাংলা ভাষা, জয় বাংলা খেয়াল কবীর। ১০/৩/২৪’। (অপরিবর্তিত)
বাংলায় মতুয়া মহাসঙ্ঘের হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকার ছুটি দেয়। আদিবাসীদের করাম পুজোতেও এখন ছুটি থাকে। এ বার তাতে যোগ হল রামনবমী। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে নানা মহলে নানান মতামতও প্রকাশ করেছে।