বাংলায় নিষিদ্ধ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। রাজ্যের কোনও হলে চালানো যাবে না বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের এই ছবি, নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের কোনও সিনেমা হলে এই ছবি চালানো হলে মুখ্যসচিবকে উপযুক্ত পদক্ষেপের নির্দেশ মমতার। দ্য কেরালা স্টোরি দেখালে অশান্তিতে উস্কানির আশঙ্কা রাজ্য সরকারের। 'এই সিনেমায় যে যব দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে বিপজ্জনক', 'দ্য কেরালা স্টোরি'কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চালানো মমতা-সরকার। এর আগে তামিল নাড়ুর সিনেমা হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য কেরালা স্টোরি’, কিন্তু তা তামিলনাড়ু থিয়েটার ওনার্স অ্যাসোশিয়েশনের সিদ্ধান্ত। এই প্রথম দেশের কোনও রাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হল ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।
বাংলায় নিষিদ্ধ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’
এইদিন রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়, 'রাজ্যে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে পশ্চিমবঙ্গে ' দ্য কেরালা স্টোরি' চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। এই সিনেমায় যেসব দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে আশঙ্কা করে কলকাতাসহ সব জেলাতে এই ছবির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হল। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই রাজ্য প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত'।
কেন বিতর্ক এই ছবি ঘিরে?
এই ছবির টিজার মুক্তির পর থেকেই দানা বেঁধেছিল বিতর্ক। তারপর সময় যত গড়িয়েছে সুদীপ্ত সেনের ছবি ঘিরে বিতর্কের আগুন ততই ছড়িয়েছে। দক্ষিণের রাজ্য কেরলের হিন্দু ও খ্রিস্টান মেয়েদের ছলে-বলে-কৌশলে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইসিসে যোগ দেওয়ানোর হাড়হিম করা ঘটনা উঠে এসেছে এই ছবিতে। হিন্দু মেয়েদের উপর চলা নির্যাতনের এই কাহিনিকে ‘ইসলাম বিরোধী’, ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি বলে বিঁধতে ছাড়েনি বাম-কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দল। কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকার এই ছবির সমালোচনা করলেও এই ছবির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।
এটির মুক্তি জাতীয় সংহতি ক্ষুণ্ন করবে, এমন অভিযোগ এনে ‘দ্য কেরল স্টোরি’র বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। যদিও সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছবির মুক্তি আটকাতে অস্বীকার করে আদালত।
সাংবাদিক বৈঠকে মমতার মন্তব্য
সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই কেলারা ফাইলসটি কী? আমি সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত মানুষকে সমর্থন করি না। কিন্তু মানুষকে সমর্থন করি।’ এর পরেই সিপিএম সম্পর্কে কড়া কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘সিপিএম তো বিজেপির সঙ্গে কাজ করে। সিপিএমের উচিত এই ছবিটির সমালোচনা করা।’ এই ছবি নিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার কথাও জানান মমতা। এরপর বলেন, ছবিটির গল্প বিকৃত। এর সঙ্গে যে বাস্তবের কোনও যোগ থাকতে পারে, এমন কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দ্য কেরালা ফাইলস— বিকৃত কাহিনি।’
তবে শেষ এখানেই নয়। এর পরে যে নিশানায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ— এমন দাবিও করেছেন তিনি। বলেছেন, তাঁর কাছে খবর আছে, এর পরেই লক্ষ্য বাংলা। এবং পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বেঙ্গলফাইল তৈরি হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমায় জানানো হয়েছে, এর পরে বেঙ্গল ফাইলসের প্রস্তুতি চলছে। প্রথম ওরা কাশ্মীরের মানুষের অসুম্মান করেছে। তার পরে কেরালার মানুষের করেছে। এবার পশ্চিবঙ্গের পালা।’
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
মমতা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব বিরোধিরা। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য এই ছবিকে ব্যান করে অন্যায় করেছে। কেন সত্যিটা দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে দিতে চাইছে না মমতাদি?…. সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়ে আপনি কী পাচ্ছেন? অপ্রত্যক্ষভাবে হলেও এটা সেইসব মানুষকে সমর্থন করা যারা ISIS-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের চিন্তা-ভাবনাকে সাপোর্ট করে’। বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট পেতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিথ্যায় আস্থা রাখতে না পেরে সরে গেছে, সেই কারণেই ভোট টানতে এই পদক্ষেপ মমতার…. ’।