একবার মধুমেহ আক্রান্ত হলে সারা জীবন এর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নানান প্রচেষ্টা করতে হয়, যাতে এর কারণে হৃদরোগের সম্ভাবনা, স্ট্রোক, কিডনির রোগ, অন্ধত্ব ইত্যাদির মতো সমস্যা দেখা না-দেয়। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি নাহলে বা ইনসুলিন সঠিক ভাবে ব্যবহার নাহলে ডায়বিটিসের সম্ভাবনা থাকে।
ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ, ক্লান্তি, তৃষ্ণা, যখন তখন ক্ষিদে পাওয়া, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, ক্ষত সেরে উঠতে সময় লাগলে, দেরি না-করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মধুমেহ ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত, যা প্রাকৃতিক ভাবেই রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। বেদিকিওর হেল্থকেয়ার অ্যান্ড ওয়েলনেসের সিইও এবং ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ড: সমুদ্রিকা পাটিল জানিয়েছেন যে, প্রাকৃতিক হার্ভ, মশলা, সবজি এবং ফল এনার্জির স্তর বৃদ্ধিতে চমৎকার সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি তিনি এমন সাতটি খাবারের উল্লেখ করেছেন, যা খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা উচিত—
১. নীম- বহু বছর ধরে শারীরিক সুস্থতার জন্য নীমের ওপর ভরসা রেখেছেন সকলে। ত্বক পরিশোধন, দাঁত এবং ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে ডিটক্সিফিকেশান পর্যন্ত নানান ক্ষেত্রে নীমের উপকার পাওয়া যায়। ড: পাটিল বলেন যে, ‘নীমের মধ্যে ফ্ল্যাভনয়েডস, গ্লাইকোসাইডস এবং ট্রিটারপেনয়েডস নামক রসায়ন থাকে, যা গ্লুকোসের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। পাওডার হিসেবে, চায়ের মধ্যে দিয়ে, জল বা খাবারের সঙ্গে দিনে দুবার এটি খেতে পারেন।’
২. করলা- সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্য মা, ঠাকুরমারা করলা খাওয়ার ওপর জোর দেন। এটি একটি ডায়বিটিস বিরোধী সবজি, যার মধ্যে চ্যারাটিন এবং মোমোরডিসিন থাকে, যা মধুমেহ রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ‘আপনি সকালে করলার রস পান করতে পারেন। এতে আমলকি বা নিজের পছন্দের কোনও সবজির রস মিশিয়ে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়ো ও নুন ছড়িয়ে পান করতে পারেন’, জানান ড: পাটিল।
৩. আদা- সকলের হেঁশেলেই আদা পাওয়া যাবে। অসাধারণ গুণে সমৃদ্ধ আদা ইনসুলিন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। ড: পাটিলের মতে, চায়ের মধ্যে আদা মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এ ছাড়াও দুধের সঙ্গে আদা এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়েও পান করা যায়। তবে আদা রান্না করে খাওয়ার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়ার কথা বলছেন তিনি। এ ছাড়া আদার পাওডারও খাওয়া যেতে পারে।
৪. কালো জাম- মধুমেহ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কালো জাম একটি অসাধারণ ও চমৎকার ফল। এই জামের মধ্যে জামোবোলাইন নামক একটি উপাদান থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জামের বীজে এই উপাদানটি পাওয়া যায়। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে, যা ইনসুলিন রেসিসটেন্সের বিপরীত। শরীরে উপস্থিত ইনসুলিনের যথাযথ ব্যবহার না-হওয়াকে ইনসুলিন রেসিসটেন্স বোঝায়, অন্য দিকে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বা সংবেদনশীলতা হল এই হরমোনের উন্নত ব্যবহারে সাহায্য করা। কালো জাম ইনসুলিম সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে ডায়বিটিসে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি কালো জাম ইমপেয়ার্ড ফাস্টিং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী
৫. মেথি- শরীরের মধ্যে গ্লুকোজ সহনশীলতা বৃদ্ধি করে মেথি। এটি দ্রাব্য ফাইবারে সমৃদ্ধ। ধীর গতির পাচন প্রক্রিয়া ও কার্বোহাইড্রেট শোষণের মাধ্যমে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৬. দারচিনি- কালোজামের পর দারচিনি অন্য আর একটি উপাদান, যা ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বা সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা উদ্দীপিত করে। অর্থাৎ এর ফলে শরীর ভালো ভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে। দিনে দুবার ২৫০ মিলিগ্রাম দারচিনি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। খাবার খাওয়ার আগে এটি খাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক সমুদ্রিকা পাটিল।
৭. জিনসেং- এটি একটি গাছের শিকড়, যা উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যায়। জিনসেং ইনসুলিনের ক্ষরণ উন্নত করে। মেথি ও কালো জামের মতো এটিও ইনসুলিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে এবং এই হরমোনের প্রতি কোষের প্রতিক্রিয়াকে আরও উন্নত করে। প্রতিদিন ৩ গ্রাম করে জিনসেং খাওয়া যেতে পারে। তবে যাঁরা অ্যাসপিরিনের মতো রক্ত পাতলা করে দিতে পারে এমন ওষুধ খান, তাঁদের ক্ষেত্রে জিনসেং কোনও কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।