সারা বিশ্বের বাতাসে কার্বনের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এই দূষণের কারণে দ্রুত হারে বাড়ছে তাপমাত্রা। ভারতের বেশ কিছু শহরের অবস্থা যথেষ্ট শোচনীয়। এমনকী পাহাড়ি গ্ৰামগুলিতেও থাবা ফেলছে দূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ব্যাপারে বহুবার সতর্কতা শুনিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে লাভ কতটা হয়েছে, তা রোজকার অবস্থাই বলে দেয়।
ভারতের বেশ কিছু পাহাড়ি অঞ্চল শুধু পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। পাহাড়ি ক্যানভাসে সুন্দর ছোট ছোট গ্ৰামগুলি যেন শিল্পীর ভীষণ যত্নে আঁকা। সেসব গ্ৰামেও এখন বায়ু দূষণ সূচক ১০০ এর কাছাকাছি। অর্থাৎ বাড়ছে দূষণের পরিমাণ। এর অন্যতম কারণ অবশ্য পর্যটনের সময় গাড়ির ধোঁয়া। তাছাড়া, ভ্রমণের সময় অনেক পর্যটক যেখানে সেখানে নির্দ্বিধায় জলের বোতল, প্লাস্টিক,বর্জ্য পদার্থ ফেলে চলে আসেন। প্রতিবাদ করলে গ্ৰামবাসীদের কপালে কখনও কখনও শহুরে দুর্ব্যবহার জোটে।
সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতিতে ফাল্গুনি সামন্তকে বেমানান বলা যায়। তিনি আর পাঁচজন পর্যটকের মতো সিটং-এর কাছে অহলদারা গ্রামে গিয়েছিলেন ঘোরার পরিকল্পনা নিয়ে। তবে তফাত গড়ে দিয়েছেন অন্য একটি ব্যাপারে। পরিবেশ দূষণ হোক, এমন কাজ তাঁর করে ওঠা হয়নি। বরং যে হোমস্টেতে ছিলেন তার দেওয়ালে রেখে এসেছেন সুন্দরের ছোঁয়া, শিল্পের ছোঁয়া।
ফাল্গুনি কলাভবনের ছাত্র। শান্তিনিকেতনের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফাইন আর্টস ও সেরামিক্স নিয়ে তাঁর পড়াশোনা। শিল্পীর মনে প্রকৃতি ও সুন্দরের প্রতি ভালোবাসা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে দেওয়াল চিত্র আঁকার পরিকল্পনা করে তো আর ঘুরতে যাওয়া নয়। যখন মাথায় এমন চিন্তা এল, তখন হাতের কাছে রং বিশেষ ছিল না। ফাল্গুনি জানাচ্ছেন, সেদিন ফেরার তাড়াও ছিল। ভালোবাসা থাকলে অন্য কিছুর অভাব সহজে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। তাই গ্রামের কিছু কচিকাঁচাই এগিয়ে এল। তাদের দেওয়া সামান্য রং নিয়েই দুঘণ্টার চেষ্টায় হোমস্টের দেওয়ালে ভালোবাসা এঁকে এলেন ফাল্গুনি। প্রকৃতির থেকে শুধু নিয়ে আসা নয়, কিছু উপহার যেন তার জন্য রেখে আসলেন শিল্পী। ছবিতে সাদা কালোর মিশেলে আঁকা ছবিতে রয়েছেন দুই দেবদেবী। বাদবাকি দেওয়াল জুড়ে কিছু পশু পাখি ও গাছগাছালির মোটিফ। যেন প্রকৃতির নিজে হাতে গড়া পৃথিবীর বার্তাই তুলে ধরছে সে ছবি।