হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া। বাংলায় এটাই বলা হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। কিন্তু হার্টের সমস্যাকে ইংরেজিতে বলতে গেলে সাধারণত দু’টি কথা বলেন সকলে। একটি হল ‘হার্ট অ্যাটাক’। অন্যটি ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’। দু’টি প্রায় সমার্থক শব্দ হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আদপে কি তাই? দু’টি কি এক? মোটেই নয়। তেমনই বলছেন চিকিৎসকরা। দেখে নেওয়া যাক, এই দু’টির পার্থক্য কী কী।
দু’টির কোনটি কখন হয়: কাকে বলে হার্ট অ্যাটাক আর কাকে বলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট?
হার্ট অ্যাটাক: | যখন করোনারি আর্টারি কোনও কারণে ব্লক হয়ে যায়, আর তার কারণে যদি হার্টের পেশিতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, তাহলে তাহেল বলে হার্ট অ্যাটাক। হৃদযন্ত্রে দু’টি আর্টারি থাকে। বাম এবং ডান। কোনও কারণে এগুলি ব্লক হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। |
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: | এটি একেবারেই আলাদা। কোনও কারণে হার্টের পাম্পিং পদ্ধতি বা স্পন্দনের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে এটি হয়। এটি হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সমস্যা থেকেই হতে পারে। এর সঙ্গে ব্লকের সম্পর্ক খুব একটা নেই। |
দু’টির মধ্যে সম্পর্ক: চিকিৎসকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক হয় হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হলে। কিন্তু কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল হৃদযন্ত্রের একটি কর্মপদ্ধতিগত সমস্যা। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ফলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় না।
দু’টির কারণ: দু’টির কারণও আলাদা আলাদা।
হার্ট অ্যাটাক: | এর সঙ্গে সম্পর্ক আছে জীবনযাপনের। ধূমপান, কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া, ডায়াবিটিস, পরিবারের হার্টের অসুখের ইতিহাসের মতো কারণ থাকতে পারে এর পিছনে। |
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: | এটির সঙ্গে জীবনযাপনের সম্পর্ক কম। মারাত্মক পরিমাণে Hypertrophic Cardiomyopathy-র কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। কম বয়সিদের মধ্যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের অন্যতম কারণ এটি। বিশেষ করে মারাত্মক শারীরিক পরিশ্রমের ফলে এটি হতে পারে। বুকের পেশিতে চাপ পড়াও এর কারণ হতে পারে। |
দু’টির লক্ষণ: হার্ট অ্যাটাক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণগুলিরও পার্থক্য আছে।
হার্ট অ্যাটাক: | ধীরে ধীরে এর লক্ষণগুলি ফুটে ওঠে। বুকে ব্যথা হতে পারে মারাত্মক ভাবে। সেটি পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাঁ হাত, কাঁধ এবং চোয়ালেও ব্যথা হতে পারে এর ফলে। এর পাশাপাশি আক্রান্তের প্রচুর ঘাম হয়। নড়াচড়ার শক্তি চলে যায়। মাথা ঘোরে। অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন তিনি। |
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: | এটির লক্ষণ কিছুটা আলাদা। আচমকা হয় এটি। সঙ্গে সঙ্গেই অচেতন হয়ে পড়েন আক্রান্ত। কিছু ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে। যদিও আগে থেকে বোঝা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। |
রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা: দু:টির ক্ষেত্রেই দ্রুত চিকিৎসার দরকার। ওষুধ এবং চিকিৎসায় রোগী সেরে উঠতে পারেন। কিন্তু দু’টিতে সুস্থ হওয়ার হারের মধ্যে পার্থক্য আছে।
হার্ট অ্যাটাক: | এটির ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে চিকিৎসা আর ওষুধ পড়লে রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় ৯৫ শতাংশ। |
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: | এটির ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে চিকিৎসা আর ওষুধ পড়লেও রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশ কমের দিকে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। |
ভারতে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যার পরিমাণ বাড়ছে। কমবয়সীরা আক্রান্ত হচ্ছেন এতে। তাই এই সময়ে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।