দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার পরেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে আসে। আবার এক বছরের অপেক্ষা শুরু হয়। কিন্তু এই কষ্ট থেকে আমাদের আনন্দ দিতে কদিনের মধ্যেই চলে আসে কালীপুজো। বাঙালির আলোর উৎসব। চারিদিকে আলোয় মেলায় সেজে ওঠে।
বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো যেমন পরিচিত। অনেকে দেখতে আসেন। বিভিন্ন বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর সঙ্গে যেমন অনেক গল্প জুড়ে থাকে, তেমনই কালীপুজোতেও। একাধিক বনেদি বাড়িতে কালীপুজো হয়ে থাকে। এর অন্যতম হল কলকাতার হালদার বাড়ির পুজো।
বউবাজারের রামনাথ কবিরাজ লেনের হালদার বাড়ির কালীপুজো বেশ বিখ্যাত। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। লক্ষ্মীনারায়ণ হালদারের হাত ধরেই এই পুজোর শুভারম্ভ ঘটে সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে।
বাদলা গ্রামের জমিদার ছিলেন লক্ষ্মীনারায়ণ হালদার। এছাড়া তাঁর বাবার কলকাতায় অনেক জমি জায়গা ছিল। তখন তাঁরা এখানে এসে ব্যবসা শুরু করেন। এই পরিবারের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল ইংরেজদের সঙ্গে। এর ফলে হালদার বাড়ির তরফে বিদেশ থেকে জিনিসপত্র আমদানি করা ছিল অত্যন্ত সহজ বিষয়। কলকাতায় তখন যে কজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন তার মধ্যে লক্ষ্মীনারায়ণ হালদার ছিলেন অন্যতম।
হালদারদের ব্যবসা যত বাড়ছিল ততই তাদের পুজোর জাঁকজমক বাড়ছিল। কুমারটুলি থেকে শিল্পী আনা হতো প্রতিমা তৈরি করার জন্য। ডাকের সাজে প্রতিমাকে সাজানো হয়। কালীপুজোর রাতে এই বাড়িতে আলো জ্বালানো হয় না। জ্বালানো হয় মোমবাতি। মোমবাতির আলোয় এই বাড়ি সেজে ওঠে। আজও সেই প্রথা মেনে চলা হচ্ছে। এই বাড়ির ঠাকুর দালানে মা কালীর দশ রূপের ছবি লাগানো রয়েছে।
এই বাড়ির কালীপুজোয় আগে পাঁঠা বলি দেওয়া হতো। কিন্তু ১৯৪২ সাল থেকে এই নিয়ম বন্ধ হয়ে যায় দাঙ্গার পর থেকে। তবে এখন আঁখ, চাল কুমড়া, ইত্যাদি বলি দেওয়া হয়ে থাকে। জন ইয়েটস, ইংল্যান্ডের ইস্পাত উৎপাদনকারী এই বাড়ির পুজোতে এসেছিলেন। এসে পুজোর আয়োজন দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে তিনি ইস্পাতের দুটি খড়গ বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। আজও সেই খড়গ দেবীর হাতে দেওয়া হয় কালীপুজোর দিন।