রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই পৌঁছায়নি পরিশ্রুত পানীয় জল। ফলে ভরসা সেই ভূগর্ভস্থ নলকূপের জল। এই ছবি শুধু কলকাতা নয়। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে এমন পরিস্থিতি। কলকাতা যতই চেহারায় বেড়েছে, ততই বেড়েছে বসতি। বহু ওয়ার্ডে জলের ভরসা হিসাবে ভূগর্ভস্থ জলের নলকূপই একমাত্র সহায়। আর এই জলের ব্যবহারে ক্রমেই নামছে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর। এদিকে, দেখা যাচ্ছে আর্সেনিকের প্রকোপও সমহারে বাড়ছে।
কলকাতা ছাড়াও, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে এই ছবি দেখা গিয়েছে। ওই সমস্ত জায়গাতেই পানীয় জলের ক্ষেত্রে যেমন নলকূপের জল ভরসা, তেমনই সেই জলে চলছে কাপড় কাচা ,বাসন ধোয়ার মতো নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্ত্বর জল রিচার্জ প্রয়োজন। এদিকে, পরিসংখ্যান বলছেস রাজ্যের ১০৭ টি ব্লক বর্তমানে আর্সেনিক কবলিত। চাষের কাজে ব্যবহার হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল। এদিকে সেই জলে থাকা আর্সেনিক ফসলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। ভূগর্ভস্থ জলস্ত র হু হু করে নামতে থাকার ফলেই বাড়ছে আর্সেনিকের মাত্রা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা গবেষক তড়িৎ রায়চৌধুরি এই বিষয়ে তুলে ধরেন পরিসংখ্যানও। তাঁর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জলের বেহিসাবি ব্যবহার কলকাতাকে বড়সড় সমস্যার মুখে ঠেলে দিতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, ৭৭টি ওয়ার্ড আর্সেনিক কবলিত। ৩৭টি এমন ওয়ার্ডও কলকাতায় রয়েছে, যেখানে ০.৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক মিলেছে জলে। এই সমস্ত ওয়ার্ডের বেশিরভাগই রয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়।
অধ্যাপকের পেশ করা তথ্য বলছে, উত্তর ২৪ পরগনার অবস্থা ব্যাপক ভয়ঙ্কর। সেখানের প্রতিটি ব্লকই প্রায় আর্সেনিক কবলিত। এরপরই দক্ষিণ ২৪ পরগনা। বারুইপুর, ভাঙড়, জয়নগর,মগরাহাট, বজবজ, বিষ্ণুপুর বেশ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের নেমে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। এছাড়াও নদিয়ার কৃষ্ণনগর, চাপড়া, রানাঘাট, নবদ্বীপ, তেহট্ট, হরিণঘাটা, কালীগঞ্জের পরিস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক নয় । চিন্তা বাড়িয়েছে বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কিছু অংশ, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বালি, এছাড়াও বহরমপুর, মানিকচক, মালদহ ঘিরে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জের সময় এসে গিয়েছে। এই নিয়ে যদি এখনই ভাবা না হয়, তাহলে আগামীতে বড় বিপদের মুখে পড়তে হবে রাজ্যের একাধিক এলাকাকে। শুধু তাই নয়, সঙ্গে সচেতনতা না বাড়িয়ে তুললে জলকে কেন্দ্র করে বড় সংকট তৈরি হতে পারে।