৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বহির্বিশ্বে কম কিন্তু ইন্টারনেটের পৃথিবীতে ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে এই বিশেষ দিন। অবশ্যই সেখানে অধিকার নিয়ে কথা কম, উদ্যাপন নিয়ে হইচই বেশি হচ্ছে। কিছু পরিচিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে আবার সভ্যতার স্বভাব-দোষে কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়াও হচ্ছে আড় চোখে। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় হল নারীর মাতৃত্ব। সভ্যতার বা অ-সভ্যতার শুরুর থেকেই নারী আর মাতৃত্বকে এক বাক্যে রাখার প্রবণতা রয়েছে। তাই বন্ধ্যা নারী হয়েছে অভাগীর স্বর্গের এক পরিচিতা। পৃথিবী জুড়েই, কোন মাতৃত্বে না বলার অধিকার কি নারীর রয়েছে? নাড়ির টান বলতে গিয়ে নারীর ইচ্ছাকে কি কখনও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে?
মাতৃত্ব একটি সামাজিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ। এর মধ্যে শুভ-অশুভ, উচিত-অনুচিতের কোনও প্রসঙ্গ নেই। নারী পুরুষের উভয়ের সক্রিয় যোগদানে সম্ভব মাতৃত্ব। তবে বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলে। এমনও কিছু দেশ রয়েছে এখনও যেখানে ধর্ষিতা নারীকে বহন করতে হয় অবাঞ্ছিত সন্তানকে। গর্ভস্থ ভ্রুণের সিদ্ধান্ত থাকে সরকার আর আদালতের। অথচ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক আঙ্গিক বহন করতে হয় সেই নারীকেই। আর 'নষ্ট' নারীর গুঞ্জন তো আছেই!
তথাকথিত শিক্ষিত পরিবারে আকারে প্রকারে সন্তান ধারণের জন্য রীতিমত চাপ দেওয়া হয়। কোনও মহিলা যদি বলেন তিনি সন্তান ধারণ করতে চান না, তখন অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। শুধু তাই নয়, ডিভোর্স বা বিচ্ছেদের মুখোমুখি হতে হয় এরকম অনেক ক্ষেত্রে। অনেকে আবার দত্তক নেওয়া মেনেই নিতে পারেন না। যে নারী নিজের শরীরে আর একটি প্রাণকে নিয়ে আসেন, তাঁর যদি নিজের শরীরের উপর অধিকার না থাকে, তাহলে কীসের অধিকার?
গুচ্ছের উদাহরণ রয়েছে, যেখানে একাধিক সন্তানের জন্য পরিবার চাপ সৃষ্টি করছে আর ডাক্তার বারবার সাবধান করে দিচ্ছেন মায়ের শরীরের কথা বলে। নাবালিকার বিয়ে আটকানো ও সন্তান ধারণ নিয়েও কি জনমত তৈরি করা গিয়েছে?
অমিতাভ বচ্চন অভিনীত জনপ্রিয় ‘পিঙ্ক’ সিনেমায় স্পষ্ট ‘না’ বলা নিয়ে অনেকে বাহবা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে ক’জন পুরুষ একটি ‘না’ মেনে নিতে প্রস্তুত রয়েছেন?
সত্যি কথা হল, প্রশ্নগুলো কিন্তু নারীবাদী নয়, বরং স্বাভাবিক কিছু প্রশ্ন। আবার জটিল উত্তর— এমনও নয়। এই সহজ প্রশ্নগুলি এড়িয়ে যাওয়ার একটি দিন যদি হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস, তাহলে দরকার নেই সেই দিনের।