ওম ছাড়া শীত মরে না—গানে গানে এই সত্য জানিয়েছেন সঞ্জীব চৌধুরী। কিন্তু সেই ওমের উৎস কী? লেপ-কাঁথা-কম্বল? সে তো বটেই, তবে এসবের চেয়েও উষ্ণতর শক্তিশালী একটি উৎস আছে। রোমান্টিক মানুষ মাত্রই তাঁর খোঁজ জানেন। হ্যাঁ, প্রিয় মানুষের আলিঙ্গন। জানুয়ারির জাঁকিয়ে বসা শীতকে এক লহমায় তাড়িয়ে দিতে পারে আলিঙ্গনের উষ্ণতা। আর আজ যে কাউকে আলিঙ্গন করতে পারেন। ক্যালেন্ডার বলছে, আজ ২১ জানুয়ারি। আর ২১ জানুয়ারি মানেই জাতীয় আলিঙ্গন দিবস। তবে কোথায় জানেন? আপনাকে তাহলে যেতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতি বছর ২১ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপন করা হয়। এটি আপনার প্রিয়জনদের প্রতি আপনার ভালোবাসা এবং স্নেহ প্রকাশের দিন বলে মনে করেন ওই মুলুকের লোকজনেরা।
তবে, শীত তাড়ানোর প্রেমময় টোটকা কিন্তু আলিঙ্গনই। এ ছাড়া আলিঙ্গনের আছে আরও নানা উপকারিতা। আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে প্রিয়জনের আন্তরিক স্পর্শের। গবেষণা বলছে, প্রীতিপূর্ণ আলিঙ্গন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। কমায় রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি, নানা শারীরিক ব্যথা দূর করে। আলিঙ্গনে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে নির্গত হয় অক্সিটোসিন হরমোন, যার ফলে মানসিক অবসাদ কমে গিয়ে মনে আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়। দুশ্চিন্তা কমে গিয়ে স্বস্তি আসে।
আলিঙ্গন স্নেহ এবং ভালোবাসার প্রকাশের একটি সুন্দরতম মাধ্যম। আলিঙ্গনের মাধ্যমে বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়ে থাকে। ইংলিশ লেখক রিচেল ই. গুডরিচ যেমন বলেন, ‘কখনও আপনি যা করতে পারেন তা হলো বন্ধুকে শক্তভাবে আলিঙ্গন করা এবং তাদের ব্যথা আপনার নিজের মানসিক হার্ড ড্রাইভে স্পর্শের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করা।’
দিনটির গুরুত্বঃ
সঙ্গীকে আবেগ দিয়ে আলিঙ্গন করা আপনার ভেতরের ভালোবাসার অনুভূতিটিকে কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে দেয়। কাউকে আলিঙ্গন করলে তা কেবল আমাদের মধ্যে শক্তিই স্থানান্তর ঘটায় না বরং প্রেমিক যুগলের মধ্যে মানসিক নৈকট্যও তৈরি করে। স্বাস্থ্যের জন্যও ভীষণই উপকারী আলিঙ্গন। গবেষণা বলছে, আলিঙ্গন মানসিক চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। স্পর্শের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সবটুকু। স্পর্শ হল সবচেয়ে সুন্দর থেরাপি পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি। অন্য যেকোনও ভাবে যোগাযোগ স্থাপনের চেয়ে বেশি তীব্র হল স্পর্শ। ২০ সেকেন্ডের জন্যও যদি কাউকে আলিঙ্গন করেন তাহলে অক্সিটোসিন এবং নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয় যা প্রাকৃতিক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
দিনটির ইতিহাসঃ
১৯৮৬ সালের ২৯ মার্চ মিশিগানের ক্যারো শহরে রেভারেন্ড কেভিন জাবর্নি এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা করেন। জাবর্নি এই দিনটি উৎসর্গ করেন মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য যাতে তারা আরও খোলাখুলিভাবে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে এবং আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান পড়ার সময়, জাবর্নি বুঝতে পারেন "একে অপরের আলিঙ্গনে এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনই নেই।"
জাবর্নি পূর্বে দ্য ক্রিশ্চিয়ান পোস্টকে বলেছিলেন, "মানুষদের ইতিবাচক মানবিক মিথষ্ক্রিয়ার প্রয়োজন। আলিঙ্গন সেই ক্রিয়ার উৎকৃষ্ট এবং নিরাপদ উপায়।"
দিনটিতে শুভেচ্ছা বার্তাঃ
১. "একটা আলিঙ্গনেই যে কোনো আত্মাকে সুখ ও শান্তি দিতে পারে। আলিঙ্গনের মাধ্যমে আনন্দ ও উষ্ণতা ছড়িয়ে দিন। জাতীয় আলিঙ্গন দিবসের শুভেচ্ছা।"
২. "আপনার প্রিয়জনদের আলিঙ্গন করার সুযোগ কখনও মিস করবেন না, কারণ তারা আপনার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। জাতীয় আলিঙ্গন দিবসের শুভেচ্ছা।"
৩. "আলিঙ্গনের মধ্যে এক ধরনের জাদুকরী আছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের আত্মাকে উজ্জ্বল করে এবং সুখ দেয়। জাতীয় আলিঙ্গন দিবসের শুভেচ্ছা।"
৪. "এই জীবনে আমি মাত্র একটাই জিনিস চাই, আর তা হলো আমার পরিবার ও বন্ধুদের আলিঙ্গন করার আরও অনেক কারণ। জাতীয় আলিঙ্গন দিবসের শুভেচ্ছা।"
৫. "আলিঙ্গনের উষ্ণতা যখন আমাকে রক্ষা করে এবং আশীর্বাদ করে, তখন আমার আর কিছুই দরকার হয় না। জাতীয় আলিঙ্গন দিবসের শুভেচ্ছা।"
আলিঙ্গন মানে সত্যিই ম্যাজিক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, আলিঙ্গন স্ট্রেস হরমোন কমাতে পারে এবং যে দম্পতি সবচেয়ে বেশি আলিঙ্গন করে তারা জীবনে সবচেয়ে সুখী হয়ে থাকে। তাই আজকের এই দিনে, নিজের প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরুন। আপনার নিকটের মানুষটিকে বোঝান ভালোবাসার চেয়ে বড়ো কিছুই নেই, বেঁধে বেঁধে থাকার থেকে মহৎ কিছুই নেই!