ইনেস মরিনিও পর্তুগালের লিসবনে নিজের দিনের কাজ গুছিয়ে অফিস থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই তাঁর ফোন বেজে ওঠে। তাঁর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সমেত একটি ভিডিয়ো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে, এমন একটি ম্যাসেজ আসে তাঁর ফোনে।
ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২১ বছর। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমি অসাড় বোধ করতে শুরু করি এবং পরিবারের অন্যদের কাছে ছুটে যাই। যাঁকে আমি বিশ্বাস করতাম, এমন একজন আমার নাম উল্লেখ করে ভিডিয়োটি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছেন। পর্ন প্লাটফর্মে এবং টুইটার ও টেলিগ্রামেও এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। ঘটনাটা আমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল।’
মরিনিওর মতো অনেক নারীই ছবি-ভিত্তিক এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাঁদের সাবেক প্রেমিকেরা বিচ্ছেদের পরে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিনা সম্মতিতে এমন পর্নোগ্রাফি আইনত দণ্ডনীয়।
মরিনিওর কথায়, ‘অনলাইনে ভিডিয়োটি দেখার পরেই আমি পুলিশের কাছে যাই। তাঁরা আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে এমন একই ধরনের আরও ঘটনার সন্ধান পান। ২০২২ সালেও এই মামলা চলছে৷’ মরিনিওর বয়স এখন ২৪ এবং এমন যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের সহায়তার জন্য ‘নো পারচিলিস' নামের একটি সংগঠন চালাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যখন হাঁটছি, তখনও মাঝেমধ্যে মনে হয়, কেউ হয়তো আমার ভিডিয়ো রেকর্ড করছে। আমি ক্যান্সার থেকে সেরে উঠেছি এবং নিজেকে সব সময় মনে করাতে থাকি, এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছি, তেমনই মামলাটিতেও জিতব।’
মরিনিওর মতো মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে ইউরোপে নতুন আইন আসছে।
জীবনযাপনের নানা দিকই এখন ক্রমশ ডিজিটাল হয়ে উঠছে। অনলাইনে ‘রিভেঞ্জ পর্ন’-এর মতো ঘটনাও বেড়ে চলেছে। পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান হেইটএইড এবং ল্যান্ডেকার ডিজিটাল জাস্টিস মুভমেন্টের জরিপে দেখা গিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ নারীই অনলাইনে আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় পান। তাঁদের অন্তত ৩০ শতাংশ ভুয়া নগ্ন ছবি বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার ভয় পান।
ডারহাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অনেক নারী জানতেও পারেন না যে তাঁরা অনলাইনে এমন অপরাধের শিকার হচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশে টয়লেটে বা কাপড় বদলানোর স্থানে তাদের অজ্ঞাতে তোলা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে অজানা একটি ভয়ও তাঁদের মধ্যে কাজ করে।’
অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপের অইন প্রণেতারা বৃহস্পতিবার ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট নামে একটি আইন পাসে সম্মত হয়েছেন। অনলাইনে অবৈধভাবে থাকা যে কোনও কিছুর ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে বাধ্য করাটাই এর লক্ষ্য।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য আলেক্সান্দ্রা গিজ এই আইন পাসের ব্যাপারে মুখর ছিলেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘এই আইনের ফলে হয়রানির শিকার নারীরা অনলাইনে থাকা এসব ছবি সহজে সরিয়ে ফেলতে পারবেন। কারণ নাম প্রকাশ না করে পরিচয় নিশ্চিত করার একটি পদ্ধতি এক্ষেত্রে রয়েছে। এর ফলে অনলাইনে গিয়ে কেবল নিজেদের চেহারা দেখিয়েই এইসব সরিয়ে ফেলার দাবি জানানো যাবে।’
তিনি জানান, বড় পর্ন প্লাটফর্মগুলোর জন্যও ফোন নম্বর নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা টিমকেও সম্ভাব্য অবৈধ ছবি চিহ্নিত করার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
ইউরোপের যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ইউরোপিয়ান সেক্স ওয়ার্কার্স রাইটস অ্যালায়েন্স অবশ্য ফোন নাম্বার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে তা তাঁদের অধিকারের পরিপন্থি হবে বলে আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক ম্যাকগ্লিন মনে করেন, এই আইনের ফলে আদতে তাঁদের লাভই হবে।
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘যৌন কর্মীদের সম্মতি ছাড়াই তাঁদের নানাভাবে ব্যবহার করে আসছিল বড় পর্ন ওয়েবসাইটগুলো। এসব থেকে তাঁরা লাভবানও হচ্ছিলেন না। বরং এখন যৌনকর্মীরা নিজেদের আয় ও নিরাপত্তা বজায় রেখেই কাজ করতে পারবেন।’