ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘নিভার’। বুধবার সকালের দিকে সেটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। সন্ধ্যার শেষ লগ্নে তা মামল্লপুরম এবং কারাইকালের মধ্যে দিয়ে তামিলনাড়ু এবং পুুদুচেরিতে আছড়ে পড়বে। সেই সময় বাড়বে ঝড়ের গতিবেগ। ঘূর্ণায়মান বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারে পৌঁছে যেতে পারে। এমনিতে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার থাকবে।
ইতিমধ্যে ‘নিভার’-এর প্রভাবে চেন্নাই-সহ তামিলনাড়ুর বিভিন্ন প্রান্তে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বইছে ঝোড়া হাওড়া এবং উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র। ‘নিভার’ যত স্থলভূমির কাছে এগিয়ে আসবে, বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বিশেষত চেন্নাই, পুডুকোট্টাই, নাগাপট্টিনাম এবং ভিল্লপুরমের মতো উপকূলীয় এলাকাগুলিতে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
তামিলনাড়ুতে ২০১৬ সালে ‘বরধা’ এবং ২০১৮ সালে ‘গাজা’ ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লেও এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাড়তি উদ্বেগ যোগ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগের দু'বারের তুলনায় দ্বিগুণ ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে ৮,৮১৩ টি ত্রাণ শিবিরে প্রায় ২.৫ লাখ মানুষকে রাখার পরিকল্পনা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেরেকেটে ১,০০০ জন এসেছেন। বুধবার ‘নিভার’ উপকূলের দিকে যত এগিয়ে আসবে, তত ভিড় বাড়বে বলে ধারণা প্রশাসনিক কর্তাদের। তামিলনাড়ুর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ফনিন্দ্র রেড্ডি বলেন, ‘আমরা চাই না যে ত্রাণ শিবিরগুলি সুপার স্প্রেডারের জায়গা হয়ে উঠুক।’
ইতিমধ্যে ১২ টি উদ্ধারকারী দল, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এ তবে ডিআরএফ) একাধিক দল, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর তরফে ১৫ টি বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং দুটি হেলিকপ্টার তৈরি রাখা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের জন্য চারটি নজরদারি ভেসেল তৈরি রাখা হয়েছে। চেন্নাইয়ে পাঁচটি বন্যা মোকাবিলার দল এবং ডুবুরিদের একটি দলকে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারইমধ্যে বৃষ্টির জেরে চেম্বাবারামবাক্কাম জলাধারে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় চেন্নাইয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বুধবার ২৪ টি ট্রেন বাতিল করেছে দক্ষিণ রেল। বুধবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে শহরতলির ট্রেন পরিষেবাও। বুধবার সরকার ছুটিও ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে পুদুচেরিতেও যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু রাখার পাশাপাশি ৯৬ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। পুদুচেরির কালেক্টর টি অরুণ বলেন, ‘প্রয়োজন হলে মানুষকে সরানো হবে, আমরা অহেতুক হটস্পট তৈরি করতে চাই না।’ তিনি জানান, অপ্রয়োজনীয় বুধবার যাতে মানুষ রাস্তায় না থাকেন, সেজন্য বাড়ি থেকে বেরোনোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুদুচেরিতে অনেক গাছ আছে। গত দু'সপ্তাহ ধরে সেগুলি ছাঁটা হয়েছে। বিপজ্জনক ব্যানার এবং হোর্ডিংও সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।’