একজন ব্যক্তির জীবন কতটা কঠিন হতে পারে, যদি তাঁর দুটি হাত না থাকে? এটি কল্পনা করাও কঠিন। এবং সেই ব্যক্তি যদি একজন চিত্রশিল্পী হন, যাঁর জীবিকার একমাত্র উৎস তাঁর হাত— তাহলে তো কথাই নেই। ৪৫ বছর বয়সী এক চিত্রশিল্পীর গল্পও একই রকম। ২০২০ সালের অক্টোবরের একটি সন্ধ্যা তাঁর জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেয়। তিনি তাঁর সাইকেল চেপে রেললাইনের কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর সাইকেলটি ভারসাম্য হারিয়ে রেললাইনের ওপর পড়ে যায়। তখনই সেখান দিয়ে একটি ট্রেন চলে গেলে ওই শিল্পীর দুই হাতই কেটে যায়।
তাঁকে এর পরে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কৃত্রিম হাত লাগানো হলেও সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছিল না। এর পরে শুরু হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষা। দিল্লির কোনও হাসপাতালে তখনও হাত প্রতিস্থাপনের অনুমতি ছিল না। সম্প্রতি, গঙ্গারাম হাসপাতাল সমস্ত প্রটোকল পূরণ করে এই অনুমতি পেয়েছে।
দিল্লিতে এই প্রথম, গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল ওই চিত্রশিল্পীর দুই হাত প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। অত্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচারটি ১২ ঘণ্টা ধরে চলে।
দক্ষিণ দিল্লির একটি নামী স্কুলের প্রশাসনিক প্রধান মীনা মেহতা তাঁর মৃত্যুর পর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছিলেন। তাঁর কিডনি, লিভার এবং কর্নিয়া তিনজন মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। এবার তাঁর হাত চিত্রশিল্পীকে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার দিকে এক ধাপ এগিয়ে দিল।
সম্প্রতি ডিডি নিউজ সোশ্যাল মিডিয়ায় চিত্রশিল্পীর ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘গঙ্গারাম হাসপাতালে দিল্লির প্রথম সফল দুই হাত প্রতিস্থাপন হল। একটি দুর্দান্ত কাহিনি এবং মানবতার একটি দারুণ উদাহরণ এই ঘটনা, একজন মহিলা, যাঁকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করা হয়েছিল, তিনি তাঁর অঙ্গ এবং তাঁর হাত দান করে যাওয়ায় এই চিত্রশিল্পীর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য একটি উপায় খুঁজে বার করা যায়। চিত্রশিল্পী সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশের মানুষ। তিনি উন্নত জীবনযাপনের সমস্ত আশা হারিয়েছিলেন।’
প্রথম ছবিতে হাত প্রতিস্থাপনের আগে চিত্রশিল্পীকে দেখা যায়। দ্বিতীয়টিতে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে দেখা যায়। তৃতীয় ছবিতে চিত্রশিল্পীকে সেই চিকিৎসক দলের সঙ্গে দেখা যায়। টুইটটি ৬ মার্চ এক্স-এ শেয়ার করা হয়।
জানুয়ারি মাসে, দিল্লির কালকা জি, নিউ গ্রিনফিল্ড স্কুল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ভাইস প্রিন্সিপাল মীনা মেহতাকে গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৯ জানুয়ারি মীনা মেহতাকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করা হয়। মীনা মেহতার সমস্ত অঙ্গ দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর পরিবার। হাতগুলি ওই চিত্রশিল্পীর জন্য সংরক্ষিত ছিল।
শিল্পীকে হাসপাতালে ডেকে দাতার সঙ্গে ম্যাচিং করানো হয়। এরপর একসঙ্গে দু’টি অপারেশন করা হয়। এক জায়গা থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সরিয়ে চিত্রশিল্পীপ হাড়, ধমনী, শিরা, পেশি ও চামড়া জোড়া লাগানো হয়।
হাতের অস্ত্রোপচারের জন্য মোট ১২ ঘণ্ট সময় লেগেছিল। দিল্লিতে এই ধরনের অপারেশন প্রথম বার হল। অপারেশনটি প্লাস্টিক সার্জারির প্রধান ডক্টর মহেশ মঙ্গল, এবং গঙ্গারাম হাসপাতালের হাতের মাইক্রোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডক্টর নিখিল ঝুনঝুনওয়ালা মিলে করেন। সঙ্গে ২০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞের একটি দল ছিল। ৬ সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর, ওই চিত্রশিল্পী এখন বাড়ি ফিরে কাজ করতে প্রস্তুত।