নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে গত মার্চ মাসেই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশে বলা হয়েছিল, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের দায়িত্বে থাকা কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতার সঙ্গে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তবে সেই কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতির নাম 'কাটতে' বিল আনছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন মন্ত্রী। কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রীই। সুপ্রিম কোর্টের মার্চের রায়কে নাকচ করতেই এই নয়া বিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের উচ্চপদে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে বিচারপতি কে এম জোসেফ, অজয় রাস্তোগী, অনিরুদ্ধ বোস, হৃষিকেশ রায় এবং সিটি রবিকুমারের সমন্বয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, অনেক রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এসেছে। তবে তাদের কেউই নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের জন্য আইন বা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া তৈরি করেনি। সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা 'অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা' বলে উল্লেখ করা হয়। বেঞ্চ বলে, 'গণতন্ত্র জনগণের ক্ষমতার সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িত... গণতন্ত্র সাধারণ মানুষের হাতে শান্তিপূর্ণ বিপ্লবকে সহজতর করে তুলবে। তবে তার জন্য নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। কোনও দুর্বল নির্বাচন কমিশন তাদের আসল দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। ক্ষমতা দখলই অনেক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলির মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু গণতন্ত্রে সরকারের কার্যক্রম ন্যায়পরায়ণ হওয়া উচিৎ।'
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশকে খারিজ করতে এবার রাজ্যসভায় বিল আনছে কেন্দ্রীয় সরকার। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে একাধিক বিষয়ে দেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে সরকার। এমনকী সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম নিয়েও সরকারের আপত্তি রয়েছে। সুপ্রিম কলেজিয়ামের সুপারিশ মতো সব নিয়োগে সবুজ সংকেতও দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। কলেজিয়াম ইস্যুতে বিগত দিনে বেশ কিছু বিস্ফোরক মন্তব্যও করেছিলেন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। রিজিজুর দাবি ছিল, জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করার যোগ্য। শুধুমাত্র কলেজিয়ামের পাঠানো প্রস্তাবকে মেনে নেওয়াই সরকারের ভূমিকা হতে পারে না। এর আগে কলেজিয়াম ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে ২০১৫ সালে মোদী সরকার জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন বা এনজেএসি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সংসদে ও ১৬টি রাজ্যের বিধানসভাতেও এই বিল পাশ করানো হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই আইনকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছিল।