রাহুল সিং
ভারতের তুলনায় চিন এবং পাকিস্তানের হাতে অধিক সংখ্যক পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। ইয়ারবুক ২০২০-তে এমন তথ্য জানিযেছে 'স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট' (সিপ্রি)। যে সংস্থা দ্বন্দ্ব, অস্ত্র, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং নিরস্ত্রীকরণের মতো বিষয়গুলি নিয়ে গবেষণা করে।
থিঙ্কট্যাঙ্কের তরফে জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চিনের হাতে ৩২০ টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। সেখানে পাকিস্তান এবং ভারতের ভাণ্ডারে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা যথাক্রমে ১৬০ এবং ১৫০ টি। গত বছরও অবশ্য পরমাণু অস্ত্র সংখ্যার নিরিখে দু'দেশের থেকে পিছিয়ে ছিল ভারত। তখন চিন, পাকিস্তান এবং ভারতের কাছে যথাক্রমে ২৯০, ১৫০-১৬০ এবং ১৩০-১৪০ টি পরমাণু অস্ত্র ছিল। তিন দেশকে একই পর্যায়ে রেখেছিল সিপ্রি।
তবে বর্তমানে সীমান্ত বিবাদের মধ্যে এই রিপোর্টের তাৎপর্য ঢের বেশি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পূর্ব লাদাখে ইতিমধ্যে নয়াদিল্লি এবং বেজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এছাড়াও লাদাখ থেকে উত্তরাখণ্ড ও সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তে দু'দেশেরই সামরিক শক্তি বৃদ্ধির ছবি পরিলক্ষিত হয়েছে।
সিপ্রির তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নিজেদের পরমাণু অস্ত্রসম্ভারের ‘উল্লেখ্যযোগ্য আধুনিকীকরণ’ করছে চিন। নতুন স্থল এবং সমুদ্র-নির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণুধর যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে ‘প্রথমবার তথাকথিত পরমাণু ত্রয়ী’ তৈরি করছে বেজিং। একইভাবে ভারত এবং পাকিস্তানও নিজেদের পরমাণু ভাণ্ডার বাড়াচ্ছে। সিপ্রির তরফে বলা হয়েছে, ‘ভারত এবং পাকিস্তান ধীরে ধীরে নিজেদের পরমাণু সম্ভারের আয়তন এবং বৈচিত্র বাড়াচ্ছে।’
সামগ্রিকভাবে অবশ্য গত বছর সারা বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা কমেছে। যা অস্ত্র আছে, সেগুলির আধুনিকীররণের কাজ চালাচ্ছে সব পরমাণু শক্তিধর দেশ। থিঙ্কট্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়া এবং আমেরিকার কাছে যথাক্রমে ৬,৩৭৫ এবং ৫,৮০০ টি অস্ত্র রয়েছে। যা সারা বিশ্বের পরমাণু অস্ত্রের ৯০ শতাংশেরও বেশি। সবমিলিয়ে বিশ্বের ন'টি পরমাণু শক্তিধর দেশে (রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন, ভারত, পাকিস্তান, ইজরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া) ১৩,৪০০-র মতো পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।
সিপ্রির তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৯ সালের গোড়ার দিকে সিপ্রির তরফে এই দেশগুলির কাছে ১৩,৮৬৫ টি পরমাণু অস্ত্র আছে বলে জানানো হয়েছিল। তা এখন কমেছে। মোটমুটি ৩,৭২০ টি পরমাণু অস্ত্র বিভিন্ন সক্রিয় বাহিনীর কাছে রয়েছে এবং প্রায় ১,৮০০ টি অস্ত্রকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে।
একইসঙ্গে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের তথ্য জানানো নিয়ে যে কম স্বচ্ছতা রয়েছে, তাও তুলে ধরেছে সিপ্রি। তাদের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অতীতের তুলনায় চিন মাঝেমধ্যেই জনসমক্ষে পরমাণু ভাণ্ডার দেখায়। তবে অস্ত্রের সংখ্যা বা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে খুব কম তথ্য সামনে আনে। ভারত এবং পাকিস্তান সরকার নিজেদের কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে মুখ খোলে। কিন্তু তাদের অবস্থা বা অস্ত্রের সংখ্যা নিয়ে কোনও তথ্য'দেয় না।'