এই প্রথম ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দফার গতি কিছুটা প্রশমিত হল। তবে আসন্ন উৎসবের মরশুমে ফের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে বলে সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভারতে সাত দিনের গড় আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চে পৌঁছে হয় ৯৩.৬১৭। তার পরের তিন সপ্তাহে সেই সংখ্যা প্রতিদিন কমে গত বুধবার হয়েছে ৭৪,৬২৩। অর্থাৎ সর্বোচ্চের থেকে ২০ শতাংশ কম।
এর থেকে স্পষ্ট যে, ভারতে যে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার প্রবণতা বহাল ছিল, অর্থাৎ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে যত দিন লাগত, তা গত একমাসে বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবারের হিসেব বলছে, আগে যে আক্রান্তের সংখ্যা দুই গুণ হতে সময় লাগত ৩২.৬ দিন, তা এখন বেড়ে ৬০ দিনে দাঁড়িয়েছে।
সংক্রমণের গতি যে কিছুটা প্রতিহত করা গিয়েছে, তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে কোভিডে মৃতের হারেও। গত ১৫ সেপ্টেম্বর অতিমারীতে মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে হয়েছিল সপ্তাহে ১,১৬৯। তার পর থেকে মৃত্যুর হার ক্রমে হ্রাস পেয়ে বুধবারের হিসেবে হয়েছে ৯৭৭, অর্থাৎ ১৬% হ্রাস পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবশ্য তিমারীর প্রকোপে ক্রমাগত ওঠানামা লেগে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমেরিকায় বর্তমানে কোভিড সংজক্রমণের তৃতীয় পর্যায় জারি রয়েছে। তুলনায় ভারতে রোগের প্রকোপ সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যভাগ থেকেই কমতে শুরু করেছে।
এই প্রবণতা বিশেষ করে লক্ষ্য করা গিয়েছে মহারাষ্ট্র, তামিল নাডু, অন্ধ্র প্রদেশ ও দিল্লিতে। এ যাবৎ এই চার রাজ্যে সম্মিলিত ভাবে দেশের মোট সংক্রমিতের ৪৬% দেখা গিয়েছে।
ভারতে সবচেয়ে বেশি রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছে মহারাষ্ট্রে, যেখানে গত ১৭ সেপ্টেম্বরের হিসেবে প্রতিদিন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২২,১৪৯। দিল্লিতে আপাতত সংক্রমণের তৃতীয় দফা চলেছে। তামিল নাডু ও অন্ধ্র প্রদেশে গত ২ ও ১ সেপ্টেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছয়। আবার কেরালা ও কর্নাটকে বর্তমানে কোভিড সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
যদিও অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ও ডিরেক্টর চিকিৎসক শাহিদ জামিল জানিয়েছেন, ‘আক্রান্তের সংখ্যা কমার লক্ষণ দেখা দিলেও আমরা এখনও অতিমারীর প্রথম দফার শেষে পৌঁছতে পারিনি। এখনও প্রতিদিন ৭৫,০০০ আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের প্রতিফলনে সংক্রমণের প্রকোপ হ্রাসের বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। কোভিড পরীক্ষার হার যদি অগস্ট মাসের মান ধরে রেখে থাকে, তা হলে এই প্রবণতা আশাব্যঞ্জক।’
সামনেই আসছে উৎসবের মরশুম। ভারতীয় অভিজ্ঞতা বলছে, এই সময় সংক্রমণের প্রকোপ একলাফে অনেকটা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। ইতিমধ্যে অগস্ট মাসে কেরালায় ওনাম উৎসবের জেরে আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ওই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সাত দিনে প্রায় ৮,০০ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নীতি আয়োগ সদস্য চিকিৎসক ভি কে পালের মতে, উৎসবের মরশুমে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার উপরে জোর দিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘মনে রাখতে হবে, এ বছর পালিত হবে মাস্কযুক্ত ছট, মাস্কযুক্ত ঈদ, মাস্কযুক্ত দশেরা ও মাস্কযুক্ত দীপাবলি।’