ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা এক মহিলার। যিনি বড় হয়েছেন ফিজিতে। ফিজিতে সংস্কৃত শব্দের চল রয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘স্বস্তিকা চন্দ্র’ নামটি ফিজিতে খুব একটা বিরল নয়। তবে এই নাম নিয়েই ঘটে যায় একটি লড়াইয়ের ঘটনা। সেই খবর উঠে আসে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ’। এই গোটা পর্বের সূত্রপাত গত বছরের অক্টোবর মাসে। যেদিন স্বস্তিকা চন্দ্র উবার ইটস-এ তাঁর খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন। খাবরের পেমেন্ট দিতে গিয়ে তিনি একটি নোটিফিকেশন পান, সেখানে লেখা রয়েছে- তাঁর নাম সংস্থার শর্ত লঙ্ঘন করছে। জানতে পারেন তাঁকে ‘ব্যান’ (নিষিদ্ধ) করছে উবর। কিন্তু কেন? অবাক হন স্বস্তিকা!
স্বস্তিকা বলছেন, নোটিফিকেশনের পর আপ-এ লেখা ছিল ' আপনার প্রথম নাম (ফার্স্ট নেম) লঙ্ঘন (বিধি) করছে , আপনাকে অ্যাপে নাম পরিবর্তন করতে হবে।' স্বস্তিকাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদন পেশ করেছে ‘দ্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার।’ উল্লেখ্য, সংস্কৃত বা হিন্দুধর্মমত অনুযায়ী স্বস্তিকা নামটি 'শুভ' কিছু বোঝালেও, ইতিহাসে জার্মানির ন্যাৎজি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত রয়েছে এই শব্দ। কারণ তাদের প্রতীক ছিল স্বস্তিকা। সেই জায়গা থেকে ওই নাম ঘিরে আপত্তি তুলে উবার থেকে ওই নোটিফিকেশন এসেছিল স্বস্তিকা চন্দ্রর কাছে বলে দাবি করছে রিপোর্ট। শুধু উবার ইটস-ই নয়, উবারের রাইড শেয়ারের ক্ষেত্রেও এই সমস্যায় পড়েন স্বস্তিকা।
এই পরিস্থিতিতে হিন্দু কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়ার মধ্যস্থতায় ও নিউ সাউথওয়েলসের অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্যোগে টানা ৫ মাস ধরে লড়াইয়ের পর ওই অ্যাপে স্বস্তিকার নাম রেজিস্টার করা যায় পুনরায়। ক্ষুব্ধ স্বস্তিকা বলছেন, ‘ওঁরা জানেন না যে হিটলার ভুলভাবে প্রয়োগের আগে হাজার বছর ধরে এই শব্দ হিন্দুরা ব্যবহার করেছেন। এটা খুবই সাধারণ নাম। আমি ৩ থেকে ৪ জনের এমন নাম জানি। স্কুলে এই নামে ২ থেকে ৩ জন সহপাঠী ছিল আমার। এই শব্দের মানে শুভ, আমার কাছে এর মানে সব শুভ। আমি আমার নাম নিয়ে খুবই গর্বিত।’ এই ঘটনায় 'জিউইশ বোর্ড অফ ডেপুটিস' ও স্বস্তিকার পাশে দাঁড়ায়।
এই দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর শেষমেশ ক্ষমা চায় সংস্থা। উবারের তরফে স্বস্তিকার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। স্বস্তিকা চন্দ্রকে ঘিরে উবার তার ক্ষমা চেয়ে যে বিবৃতি জারি করেছে, তাতে লেখা রয়েছে,' আমরা বুঝি যে নামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতা রয়েছে, এবং তাই আমাদের টিমগুলি প্রতিটি অ্যাকাউন্টকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে নিশ্চিত করে ও প্রতিটি ক্ষেত্রের ভিত্তিতে এই ধরনের ঘটনাকে সম্বোধন করে। এক্ষেত্রে আমরা মিসেস চন্দ্রর অনুরোধ পর্যালোচনা করেছি, আর অ্যাপে তাঁর নাম পুনঃস্থাপিত করে দিচ্ছি।' উবার ক্ষমা চেয়ে লিখছেন, ‘আমরা মিসেস চন্দ্রার কাছে এই অসুবিধার জন্য ক্ষমা চেয়েছি, এবং আমরা তার ধৈর্যের প্রশংসা করি।’