আমেরিকায় ভারতীয় ছাত্রদের মৃত্যু রহস্যজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। গত মাস থেকে নিখোঁজ ২ বছর বয়সী এক ভারতীয় ছাত্রের লাশ, আমেরিকান শহর ক্লিভল্যান্ডে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুর এটি দ্বিতীয় ঘটনা ছিল। হায়দরাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল আরাফাত গত বছরের মে মাসে ক্লিভল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করার জন্য আমেরিকায় এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
ভারতের হায়দরাবাদের নাচারামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল আরাফাত এই বছরের ৭ মার্চ থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। আবদুলের বাবা মোহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, ছেলের নিখোঁজ হওয়ার দশ দিন পর তিনি একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন পেয়েছিলেন, যিনি দাবি করছিলেন যে আরাফাতকে অপহরণ করা হয়েছে। তাঁকে বাঁচাতে চাইলে ডলার ১২০০ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় যার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা (৯৯৮১০.৫৪ টাকা) মুক্তিপণ দিতে হবে, আর, এই টাকা না দিলে তাঁর আবদুলের কিডনি বের করে নেবে বলেও হুমকি দিয়েছিলেন।
এর পরে, ২১ মার্চ, নিউইয়র্কে ভারতীয় দূতাবাস (কনস্যুলেট জেনারেল অফ ইন্ডিয়া, নিউইয়র্ক) এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। যেখানে লেখা ছিল, ভারতীয় দূতাবাস মোহাম্মদ আবদুল আরাফাতের পরিবার এবং আমেরিকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁদের খুঁজে বের করতে আমরা স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সাথে কাজ করছি।
আবদুলের লাশ উদ্ধারের পর নিউইয়র্কের ভারতীয় দূতাবাস 'এক্স'-এ একটি পোস্টে বলেছে, এটা জেনে দুঃখিত যে মোহাম্মদ আবদুল আরাফাতের মৃতদেহ, যার জন্য অনুসন্ধান অভিযান চলছিল, ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে পাওয়া গিয়েছে। সমবেদনা রইল। ছাত্রের মৃত্যুর তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য দূতাবাস স্থানীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করছে৷ কনস্যুলেট বলেছে, আমরা মৃতদেহ ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শোকাহত পরিবারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করছি।
- ভারতীয় ছাত্রদের মৃত্যু
উল্লেখ্য, এই বছরের শুরু থেকে আমেরিকায় ভারতীয় ছাত্রদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অনুমান, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয়দের ক্রমাগত টার্গেট করা হচ্ছে। তাঁদের হত্যা করা হচ্ছে। এই ফেব্রুয়ারির শুরুতে শিকাগোতে এক ভারতীয় ছাত্রকে নৃশংস হামলার শিকার হতে হয়েছিল। এছাড়াও চলতি বছরের শুরু থেকেই যে ১২ জন ভারতীয় ছাত্র আমেরিকায় পড়তে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার খবর নিম্নরূপ।
- ৩ জানুয়ারী, ২০২৪ - জর্জিয়ায় ২৫ বছর বয়সী বিবেক সাইনি এক মাদকাসক্তের হাতে খুন হয়েছেন।
- ১৭ জানুয়ারী - ২২ বছরের নীল আচার্য পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মারা গিয়েছেন।
- ১৮ জানুয়ারী - ২১ বছরের আকুল ধাওয়ান ইউনিভার্সিটি অফ আরবানা-চ্যাম্পেইন ক্যাম্পাসে মারা গিয়েছেন।
- ২৩ জানুয়ারি- ২৫ বছরের সমীর কামাথের মৃতদেহ একটি সংরক্ষিত এলাকায় পাওয়া গিয়েছিল, যদিও মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।
- ৩১ জানুয়ারী- ১৯ বছরের শ্রেয়াস রেড্ডির হোস্টেল রুমে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, মৃত্যুর কারণ অজানা।
- ৬ ফেব্রুয়ারি- ২০ বছর বয়সী জি. দীনেশ এবং নিকেশের মৃতদেহ তাঁদের ঘরে পাওয়া গিয়েছিল, মৃত্যুর কারণ গ্যাস লিকেজ বলে জানা গিয়েছে।
- ৭ ফেব্রুয়ারী - ৪১ বছরের বিবেক তানেজা একটি রেস্তোরাঁয় হামলার শিকার হয়েছিলেন, পরে চিকিৎসা চলাকালীন তিনি মারা যান।
- ১ মার্চ 1- রাজ ওরফে গোল্ডি, বিজনোর, ইউপির বাসিন্দা, আলাবামা রাজ্যের গুরুদ্বারের সামনে খুন হয়েছিলেন।
- ১৬ মার্চ- গাড়ি থেকে ২০ বছর বয়সী অভিজিতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল, মৃত্যুর কারণ অজানা।
- ৭ এপ্রিল - ক্লিভল্যান্ড, ওহাইওতে ছাত্রী উমা সত্য সাই গড্ডের রহস্যজনক মৃত্যু, কারণ অজানা।
- ৯ এপ্রিল- হায়দরাবাদের মহম্মদ আবদুলের মৃতদেহ ক্লিভল্যান্ডেই পাওয়া গিয়েছে।