রাফাল যুদ্ধবিমানের জন্য ভারতের সঙ্গে ৫৯,০০০ কোটি টাকার চুক্তিতে 'দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের' অভিযোগ। এবার এক বিচারকের তত্ত্বাবধানে ফের শুরু হতে চলেছে তদন্ত। ফরাসি সংবাদমাধ্যম মিডিয়াপার্টের প্রতিবেদন সূত্রে মিলেছে এমনই খবর।
'২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত আন্তঃসরকারি চুক্তিটি গত ১৪ জুন তদন্তের স্বার্থে খোলা হয়েছে,' জানিয়েছে মিডিয়াপার্ট। শুক্রবার ফরাসি পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা তদন্ত শুরুর কথা স্বীকার করেছে।
এর আগে চলতি বছর এপ্রিলে রাফাল চুক্তিতে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয় মিডিয়াপার্টেরই একাধিক রিপোর্টে।
এই রিপোর্টগুলির মধ্যে একটিতে ফ্রান্সের পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসের আর্থিক অপরাধ শাখার (PNF) প্রাক্তন প্রধান, ইলাইন হোলিটের বিরুদ্ধে তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। সেখানে বলা হয়, সহকর্মীদের আপত্তি সত্ত্বেও ইলাইন রাফাল জেট চুক্তির তদন্ত হঠাত্ বন্ধ করে দেন। কারণ হিসাবে ইলাইন জানান, 'ফ্রান্সের এবং সংস্থাগুলির স্বার্থের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
ইলাইনের পরে এখন পিএনএফের প্রধান জিন-ফ্রানসোইস বোহনার্ট। তিনি পদ গ্রহণ করেই তদন্ত পুনররাম্ভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আপাতত, প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সোইস ওঁলার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন তদন্তকারীরা। রাফাল চুক্তি সই হওয়ার সময়ে বর্তমান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান বিদেশমন্ত্রী জিন-ইয়ভেস লে ড্রিয়ান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। তাঁদেরকেও এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

দুই সরকারের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত যুদ্ধবিমানের অর্ডার দেয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলি এই চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বিরোধীদের দাবি, বর্তমান সরকারের তত্ত্বাবধানে ভারত এক একটি যুদ্ধবিমান কিনছে ১,৬৭০ কোটি টাকা করে। এদিকে ইউপিএ সরকার যখন এই বিমানই কেনার পরিকল্পনা করছিল, ৫২৬ কোটি টাকা করে প্রাথমিক বিডে দাম উঠেছিল। অর্থাত্ প্রায় তিন গুণ দামে বর্তমান সরকার একই বিমান কিনছে বলে অভিযোগ। আর এখানেই দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা।

শুধু তাই নয়। কংগ্রেসের দাবি, সেই সময়ে এই দামেই প্রযুক্তির হস্তান্তর চুক্তিও পেত ভারত। তাতে পরবর্তীকালে রাফাল বিমানের প্রযুক্তি ভারতীয় বিমান তৈরিতে প্রয়োগ করা যেত। কিন্তু বর্তমানের বেশি দামের চুক্তিতে সেই বিষয়ে কোনও উল্লেখই নেই।
যদিও এনডিএ সরকার রাফালের দামের বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে বর্তমান সরকারের দাবি, ২০১২-র ইউপিএ আমলের চুক্তি, কার্যকর ছিল না। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর নিজেই বলেন যে, এই দামে কখনই রাফাল বিমানগুলি কেনা যেত না। ওটা নিলামে প্রাথমিক দর মাত্র। আর সেই কারণেই ইউপিএ সরকার ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি।
কিন্তু এত বড় অঙ্কের চুক্তি বিষয়ে তথ্য কেন প্রকাশ করছে না বর্তমান সরকার?
এনডিএ সরকারের দাবি, দামের বিষয়ে দুটি কারণে কিছু বলা যাবে না-
প্রথমত, ফ্রান্সের সঙ্গে গোপনীয়তার চুক্তি, এবং
দ্বিতীয়ত, ভারতের শত্রু দেশ যাতে প্রতিরক্ষার বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে না যায়।
তবে খরচ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বলা হয় যে, এই চুক্তিতে কাস্টমাইজড অস্ত্রশস্ত্র দেওয়ার কথাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া এই চুক্তি যাচাই করেন। 'জেটগুলির জন্য ভারত অতিরিক্ত দাম দেয়নি,' বলে জানানো হয় সেই রিপোর্টে।
সুপ্রিম কোর্টে এই চুক্তির বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে রাফাল চুক্তিতে কোনও অসামঞ্জস্য নেই বলে জানায় সর্বোচ্চ আদালত।