কোনও ব্যক্তি স্বস্থ্য বিমা করলে তাতে নিজের পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতেই পারেন। তবে সেই ক্ষেত্রে তাঁর কন্যা যদি বিবাহিত হয়, তাহলে কি তিনি বাবার নেওয়া পারিবারিক স্বাস্থ্য বিমার অধীনে লাভবান হতে পারেন? এই প্রশ্নই তোল হয়েছিল গুজরাটের বরোদায়। সেখানকার উপভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। আর সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সরকারি কমিশন জানিয়ে দিল, কন্যা বিবাহিত হলেও বাবার নেওয়া পারিবারিক স্বাস্থ্য বিমার আওতায় থাকতে পারেন।
উল্লেখ্য, বরোদার বাসিন্দা ভরত চৌধুর 'দ্য নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড'-এর থেকে একটি স্বাস্থ্য বিমা কিনেছিলেন। সেই স্বাস্থ্য বিমার আওতায় নিজের মেয়ের চিকিৎসার খরটানোর আবেদন জানিয়েছিলেন বিমা সংস্থার কাছে। তবে নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসুরেন্স কোম্পানি তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। ভরতের মেয়ের চিকিৎসার খরচ মেটাতে অস্বীকার করে তারা। আর এরপরই ভরত এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন বরোদা উপভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন জানায়, বাবার স্বাস্থ্য বিমার আওতায় পড়বে বিবাহিত কন্যাও। এই আবহে নিউ অ্যসুরেন্স কোম্পানিকে ভরতের মেয়ের চিকিৎসার খরচ মেটানোর নির্দেশ দেয় উপভোক্তা কমিশন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২০০৯ সালে ভরত নিউ অ্যাসুরেন্স কোম্পানি থেকে একটি স্বাস্থ্য বিমার পলিসি কিনেছিলেন। সেটি একটি পারিবারিক স্বাস্থ্য বিমা পলিসি ছিল। প্রতি বছরই নিয়ম করে সেই পলিসির প্রিমিয়ামও ভরেছেন ভরত। ইতিমধ্যেই তাঁর কন্যা অঙ্কিতার বিয়ে হয়। ২০২১ সালে বিবাহিত অঙ্কিতার মূত্রনালিতে সংক্রমণ ধরে পড়ে। তার চিকিৎসার জন্য তিনি হাসপাতালে ভরতি হন। সেই চিকিৎসা বাবদ যা খরচ হয়, তা মেডিক্লেম বাবদ মেটানোর আবেদন জানানো হয় নিউ অ্যাসুরেন্স কোম্পানিকে। মোট ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল অঙ্কিতার চিকিৎসায়। তবে সংস্থা জানায়, অঙ্কিতা যেহেতু বিবাহিত, তাই বাবার পারিবারিক পলিসির অধীনে তাঁর চিকিৎসার খরচ মেটাবে না তারা। তাদের দাবি ছিল, পলিসির প্রিমিয়াম দেওয়ার সময় ভরত জানাননি যে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এই আবহে একাধিক জায়গায় চক্কর কেটেও শেষ পর্যন্ত কোনও সুরাহা পাননি ভরত। শেষ পর্যন্ত তিনি উপভোক্তা কমিশনের দ্বারস্থ হন। এরপর কমিশনের তরফে দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শোনা হয়।
কমিশন জানায়, পলিসিতে কোথাও উল্লেখ করা নেই যে কন্যা বিবাহিত হলে বাবার পারিবারিক পলিসির আওতায় সে পড়বে না। পলিসিতে বলা হয়েছে, ৩ মাস থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত কোনও সন্তান যদি তার বাবা-মায়ে ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলেই পারিবারিক পলিসির আওতায় তার চিকিৎসার খরচের খরচ বহন করবে সংস্থা। এর আগেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে অঙ্কিতা হাসপাতালে ভরতি হলে ২০২০ সালে তার চিকিৎসার খরচ মিটিয়েছিল সংস্থাই। এই পরিস্থিতিতে অঙ্কিতার ২০০৯ সালের চিকিৎসার খরচও মেটাতে হবে সংস্থাকে। এই আবহে নিউ অ্যাসুরেন্সকে ৬৫,৮৪৬ টাকা মেটাতে বলেছে কমিশন। সঙ্গে সেই টাকার ওপর বার্ষিক ৯ শতাংশ সুদ জরিমানাও দিতে বলা হয়। এছাড়া আবেদনকারীর মানসিক অশান্তির জন্য ২০০০ টাকা জরিমানাও দিতে বলা হয়েছে। এই সংক্রান্ত মামলার খরচও সংস্থাকেই মেটাতে বলা হয়েছে।