নাগাড়ে পাঁচ মাস কোভিড রোগীদের দেহ দাহ করে ক্লান্ত গুয়াহাটির বাসিন্দা রামানন্দ সরকার (৪৩)। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ দেহ সৎকার করেছেন তিনি।
কোভিড রোগীর দেহ সৎকার করার কাজ যথেষ্ট ঝুঁকিবহুল ও শ্রমসাধ্য। দিনের পর দিন সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন গুয়াহাটির উলুবাড়ি শ্মশানের কর্মী রামানন্দ। তাঁর হিসেবে, ‘গত এপ্রিল মাস থেকে কোভিড রোগীদের সৎকার করছি। প্রথম দিকে দিনে ১-২টি দেহ শ্মশানে আসত। কিন্তু ক্রমে তা বেড়ে গিয়ে বর্তমানে দিনে ১০-১২টি দেহ দাহ করা হচ্ছে।’
গত কয়েক সপ্তাহে অসমে কোভিড সংক্রমণের হার বেশ কিছুটা বেড়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ১,৩০,৮২৩ এবং মৃত ৩৭৮। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কামরূপ মেট্রোপলিটান ডিস্ট্রিক্ট-এর, যার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে গুয়াহাটি শহর। প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ পজিটিভ রোগীর সন্ধান মিলছে এই অঞ্চলে।
গুয়াহাটিতে মৃত কোভিড রোগীদের শেষকৃত্যের অধিকাংশই সারা হচ্ছে উলুবাড়ি শ্মশানে। কিছু দেহ পাঠানো হচ্ছে ভূতনাথ শ্মশানেও। এ ছাড়া ৭২টি দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছে আঠগাঁও ও ইসলামপুর গোরস্থানে।
উলুবাড়ি শ্মশানের দেহ সৎকারের দায়িত্বে রামানন্দ সরকারের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর দুই সহকারী। রামানন্দ জানিয়েছেন, ‘আজকাল দুপুর তিনটে থেকে আমরা দেহ সৎকার করা শুরু করি। কাজ শেষ করতে রাত ২টো-৩টে বেজে যায়। এক এক সময় মনে হয়, স্রোতের মতো দেহ আসার বুঝি বিরাম নেই। আমাদেরও কোনও বিশ্রাম নেই। বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়ি আমরা। আগে কোভিড রোগীর দেহ সৎকার করতে ভয় পেতাম, এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’
মধ্য অসমের নোরিগাঁও জেলার জাগিরোডের বাসিন্দা রামানন্দ বছর দুয়েক আগে গুয়াহাটি পৌঁছানোর পরে প্রথমে ভূতনাথ শ্মশানে কাজে বহাল হয়েছিলেন। পরে তাঁকে উলুবাড়িতে বদলি করে জেলা প্রশাসন। গুয়াহাটি শহরের এক হোটেলে সরকারি খরচে তিনি বসবাস করেন। একাধিক বার তাঁর কোভিড পরীক্ষা হলেও এখনও পর্যন্ত পজিটিভ ফল মেলেনি।
অসমের স্বাস্থ্যকরক্তাদের দাবি, সরকারি হিসেবে কোভিডে মৃতের সংক্যা ৩৭৮ হলেও অন্যান্য রোগে মৃতরা পরে কোভিড পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ায় মোট সংখ্যা অনেক বেশি।
এর মধ্যে সম্প্রতি গুজব রটে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং কর্মী সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ার জেরে নিহত কোভিড রোগীদের দেহ দীর্ঘ দিন মর্গে পড়ে রয়েছে।
কামরূপ মেট্রোপলিটান ডিস্ট্রিক্টের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার চিন্ময় নাথ জানিয়েছেন, রাজ্যের বৃহতত্তম সরকারি হাসপাতাল গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে মৃত কোভিড রোগীদের যথাসময়ে সৎকার করা হলেও সমস্যা দাঁড়াচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে মৃত কোভিড রোগীদের নিয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেরিতে খবর দেওয়ার ফলেই বিলম্বিত হচ্ছে দেহ সৎকার প্রক্রিয়া।