একটা ট্রেন্ড লক্ষ্য করেছেন? একসময়ে পুরুষদের এথনিক পোশাক হিসাবে শেরওয়ানির প্রচলন বেশ সীমিত ছিল। মূলত উত্তর ও পশ্চিম ভারতীয়দেরই শেরওয়ানি, কুর্তা ব্যবহার করতে দেখা যেত। সেই ছবিটা ধীরে ধীরে বদলে যায়। বর্তমানে সারা ভারতের মানুষই উত্তর ভারতীয় ধাঁচের এথনিক পোশাক পরেন। বাঙালিদেরও অনেকে তসরের পাঞ্জাবির বদলে শেরওয়ানি বা কুর্তা পরে বিয়ে করতে যান।
এত কিছু বলার কারণ? কারণ এই বদলাতে থাকা বাজারটা পর্যবেক্ষণ করলেই, মান্যবরের(Manyavar) উন্নতির কারণ বুঝতে পারবেন। এক সময়ে শেরওয়ানি, কুর্তার মতো পোশাক মানেই তা মধ্যবিত্তের বাজেটের বাইরে হত। যাঁদের বাজেট থাকত, তাঁরাও ভাল নকশা, পছন্দসই পেতেন না। আর সেটাই বদলে দেয় মান্যবর। এথনিক পোশাকের বাজারে যেন এক নতুন দমকা হাওয়া আনে সংস্থা। আরও পড়ুন : Nykaa: ৫০ বছরে বয়সে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা, আজ দেশের ধনীতম মহিলা ফাল্গুনী
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং এমডি রবি মোদী সম্প্রতি প্রকাশিত IIFL হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২২-এ বছরের অন্যতম উচ্চ আয় করা ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন। তাঁর মোট সম্পদ প্রায় ৩৭৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর মোট সম্পদের অঙ্ক জানেন? ৩২,৪০০ কোটি টাকা। গত বছরই দেশের ধনীতমদের তালিকায় ২৪৬ নম্বরে ছিলেন রবি মোদী। আর বর্তমানে তিনি উঠে এসেছে ৪১ নম্বরে। ব্র্যান্ড হিসাবে মান্যবরের সাফল্যই যে এর মূলে, তা বলাই বাহুল্য।
মান্যবর ব্র্যান্ডটি আসলে বেদান্ত ফ্যাশনের(তাঁর ছেলের নামে) অধীনে। ১৯৯৯ সালে কলকাতায় মান্যবরের প্রথম দোকান খোলা হয়। আজকের মান্যবর মানেই ঝাঁ চকচকে সাজানো দোকান। কিন্তু সেই সময়ে একটি ১৫০ বর্গফুটের সাধারণ দোকান দিয়েই পথ চলা শুরু করেন রবি মোদী। আর আজকে সেই মান্যবরই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও দোকান খুলেছে। ভারত ও বিদেশ মিলিয়ে মোট ১৮০টি শহরে ৫৭০টিরও বেশি দোকান মান্যবরের। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের এথনিক পোশাকের ব্র্যান্ড ‘মোহে’ (Mohey) ৬৯০ কোটি টাকার রেভেনিউ বেদান্ত ফ্যাশনের। গত ফেব্রুয়ারিতে শেয়ার বাজারেও প্রবেশ করে সংস্থা। আরও পড়ুন : Top 10 richest women: ভারতের ১০ ধনীতম মহিলা ব্যবসায়ীদের চেনেন?
বেদান্ত- যাঁর নামে এই সংস্থা, তিনি বর্তমানে বেদান্ত ফ্যাশনস-এর চিফ মার্কেটিং অফিসার। তাঁর মা শিল্পী সংস্থার বোর্ড সদস্য। ব্র্যান্ডের মুখ হয়েছেন আলিয়া ভাট, বিরাট কোহলির মতো সেলেব্রিটিরা।
তবে এতকিছুর পরেও আগের মতোই ছিমছাম সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাস করেন রবি মোদী। কলকাতার কাছেই শহরতলির এক আবাসনে থাকেন তিনি। শহরের কোলাহল থেকে দূরে। শখ বলতে ভাল গাড়ি। কিন্তু তার পিছনেও একটি কাহিনি রয়েছে।
মান্যবর ও মার্সিডিজের গল্প
২০০২ সাল। ততদিনে মান্যবর ভালই চলতে শুরু করেছে। পারিবারিক জমানো টাকাও রয়েছে। সেই সময়েই রবি মোদীর শখ ছিল একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির। কিন্তু মন থেকে যেন কিছুতেই সায় পাচ্ছিলেন না। তাঁর খালি মনে হতে থাকে, শখের পিছনে এতগুলো টাকা খরচ করব! ফলে সেই গাড়ি আর তখন কেনেননি। দোকান থেকে যে মুনাফা হত, সেটা দিয়ে ব্যবসা আরও বাড়াবেন বলে স্থির করেন। অর্থাত্ আরও দোকান, ডিজাইনার, বিজ্ঞাপন, কর্মীদের বেতনে টাকা বিনিয়োগ করেন। আর তার ফলও পেয়েছেন। আজ দেশের অন্যতম বড় ব্র্যান্ড মান্যবর। চাইলে বিশ্বের যে কোনও দামি গাড়ি কিনতে পারেন রবি মোদী।
মান্যবরের সাফল্যের পর অবশ্য নিজেকে স্বপ্নের গাড়িটি উপহার দেন রবি। প্রায় ১৫ বছর অপেক্ষার পর, ২০১৭ সালের কেনেন তাঁর সাধের মার্সিডিজ। রবি মোদীর এই সাফল্যের কাহিনী আগামী প্রজন্মকে আরও পরিশ্রম করতে ও ভাল কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে শেখাবে।