বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই কূটনৈতিক মহলে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান শান্তি প্রক্রিয়া ইস্যুতে। এবং আন্তর্জাতিক মহলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে বড় ভূমিকা পালন করছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরব। আরবের এই দুই দেশের সম্পর্ক ভারত ও পাকিস্তান, উভয়ের সঙ্গেই ভালো। যদিও এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে চুপ নয়াদিল্লি।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই সৌদি সফর সম্পন্ন করেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইমরানের সৌদি সফর সম্পন্ন হতেই সৌদি বিদেশমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ দাবি করেন যে ভারত-পাকিস্তান শান্তি প্রক্রিয়াতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে তাঁর দেশ। পাশাপাশি ২০০৩ সালের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি পুনর্বহাল করে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করায় ভারত ও পাকিস্তানের প্রশংসাও করেন তিনি। এই সময়ে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন ফয়সাল। তিনি বলেন, 'ভারতের সঙ্গে ক্রমেই সম্পর্ক ভালো হচ্ছে সৌদি আরবের। আমরা দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনাকে ঠান্ডা করার লক্ষ্যে কাজ করব।'
উল্লেখ্য, সৌদি বিদেশমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কয়েক সপ্তাহ আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আরব আমিরশাহির রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল ওতাইবা জনসমক্ষে মেনে নেন যে ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর নেপথ্যে বড় ভূমিকা পালন করেছে তাঁর দেশ। তিনি এও জানান যে ক্রমেই আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশ ফের শান্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে। কাশ্মীর ইস্যুতেও আলোচনা এগোচ্ছে।
এদিকে ভারত-পাকিস্তান শান্তি প্রক্রিয়া তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপের বিষয়টি এর আগে প্রত্যেকবার উড়িয়ে দিয়ে এসেছে নয়াদিল্লি। তবে সৌদি এবং আমিরশাহির তরফে এই সংক্রান্ত বক্তব্যের পরও নয়াদিল্লি চুপ। যা নিয়ে বেড়েছে জল্পনা। আর এর জেরেই আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে ভারত-পাকিস্তান আলোচনায় মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা এই ব্যাক চ্যানেল আলোচনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে গত জানুয়ারিতে দুবাইতে ভারত-পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স প্রধানদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পরই সংঘর্ষবিরতি চুক্তি মানার বিষয়ে সম্মত হয় দুই দেশ। এদিকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান আলোচনা চলাকালীনও ভআরত-পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স আধিকারিকরা কথা চালিয়ে গিয়েছে। সেই বৈঠকটি যুক্তরাজ্যে হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়েছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির। এদিকে ভারতের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সম্পর্ক ক্রমেই মধুর হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে আব্রাহাম চুক্তির ফলে ইজরায়েলের সঙ্গেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সম্পর্ক শুধরেছে আগের তুলনায়। এরই মাঝে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিকশাহি বুঝেছে যে দক্ষিণ এশিয়া শান্ত থাকলে তা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ভালো। এই আবহে এই অঞ্চলে আরও প্রভাব বিস্তার করতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঝামেলা মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি এবং আমিরশাহি।