ভারতের এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম সেন্থিলনাথন বলেছেন, দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার আর্থিক বোঝা কমাতে সহযোগিতা করতে চায় ভারত। এ জন্য তারা শ্রীলঙ্কাকে ঋণপরিশোধের জন্য ১২ বছরের সময়সীমা দেওয়ার কথা ভাবছে।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে বিগত সাত দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা। তারা দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছে ৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, চিনের কাছে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, প্যারিস ক্লাবের কাছে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ভারতের কাছে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিশ্বজনীন মন্দার বাজারে এই ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রটি দ্রুত অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত শ্রীলঙ্কার আগামী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা নিয়ে।
সেন্থিলনাথন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আইএমএফের সাথে শ্রীলঙ্কার আলোচনা চলছে। আগামীতে আরও পুনর্গঠন প্যাকেজ আসবে শ্রীলঙ্কায়। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পারব বলেই আশা করা যায়। তবে আমরা ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে যা পাওয়ার কথা ছিল, সেই সময়সীমা ১০ থেকে ১২ বছরে পর্যন্ত বাড়াতে হতে পারে।’ সেন্থিলনাথন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে মুদ্রাস্ফীতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কারণে সুদের হার হ্রাস পাবে। তিনি আগামী ৫-৬ বছরের জন্য শ্রীলঙ্কাকে ছাড় দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেন্থিলনাথন আরও বলেন, এর পরবর্তীতে বাজারের উন্নতি হবে।
এই বছরের শুরুর দিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং ঋণ পরিশোধে সাহায্য করার জন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। আইএমএফ কর্তৃক অনুমোদিত ৪৮ মাসের কর্মসূচির অধীনে দ্বীপ রাষ্ট্রটি প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৩৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা পেয়েছে।উল্লেখযোগ্যভাবে, শ্রীলঙ্কার আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে, কারণ এটি ২৮৬টি দ্রব্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। মূলত আগের সময়ে শ্রীলঙ্কা সরকার সামুদ্রিক খাবার, ইলেকট্রনিক্স, বাদ্যযন্ত্র সহ ৩,২০০ টিরও বেশি দ্রব্যের ওপর আমদানি ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
এছাড়াও, দেশটির সঞ্চয় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মে মাসে গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। যা বন্ধু রাষ্ট্রগুলির আর্থিক সহযোগিতা এবং পর্যটন আয়ের দ্বারা এই প্রাথমিক উন্নতি সম্ভব হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ঋণের অর্থ ফিরিয়ে নেওয়ার আগে এই প্রতিবেশী দ্বীপ রাষ্ট্রটির অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কিছুটা সময় দিয়ে চাইছে ভারত সরকার।